রায়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় আ.লীগ
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ডের’ সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি দলটি।
ঘটনার ১৪ বছর পর আজ বুধবার দুপুরে বর্বরোচিত ও নৃশংস এই হামলার রায় ঘোষণার পর পরই এক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। ৪৯ আসামির মধ্যে বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত এ রায় দেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘মাস্টারমাইন্ড কে, এটা দেশের জনগণ ভালো করেই জানে। এটা এখন আর… এখন আর কোনো গোপন কোনো কিছু নয়, প্রকাশ্য দিবালোকের মতো সত্য। এবং ১৪ বছর ধরেই এ নিয়ে মানুষের সে… আলোচনা, সমালোচনা এবং নিন্দাঝড় ১৪ বছর ধরেই চলছে।’
‘এই ২২টি প্রাণ, মিসেস আইভি রহমানসহ ঝরে গেছে, রক্তাক্ত প্রাণহীন হয়ে গেছে, আরো দুজন অজানা; মোট ২৪ জন। এই নির্মম, নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মামলা, ওই মুহূর্তে এর কোনো মূল্য ছিল না। কারণ তখনকার সরকার আলামত পর্যন্ত নষ্ট করে দিয়েছে। এফবিআইকে তদন্ত করতে দেয়নি, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে বাংলাদেশে আসতে দেয়নি; জজ মিয়া নামক একটা ছেলেকে ধরে এনে জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিল। এগুলা সবাই জানে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ‘তখন ক্ষমতায় যারা, খালেদা জিয়া ক্ষমতায়, তখন হাওয়া ভবনই বিকল্প পাওয়ার সেন্টার ছিল। মুফতি হান্নান নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়ে গেছে যে অপারেশন চালানোর পূর্বমুহূর্তে তারেক রহমানের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। কী, আপনারা ভুলে গেছেন?’
ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘আমি বলতে চাই আজকে… আমার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে আমরা… বিলম্বিত হলেও এ রায়ে আমরা অখুশি নই, কিন্তু আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্টও নই। কারণ, এ রায়ে প্ল্যানার এবং মাস্টারমাইন্ডের শাস্তি হওয়া উচিত ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলটির সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।