আসামিপক্ষ ন্যায়বিচার পাননি : আইনজীবী
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি’ দাবি করে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে’ এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার ১৪ বছর পর আজ বুধবার দুপুরে বর্বরোচিত ও নৃশংস এই হামলার রায় ঘোষণার পর পরই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন এ প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্ত করেন।
গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। ৪৯ আসামির মধ্যে বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত এ রায় দেন।
পরে প্রতিক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ন্যায়বিচার এখানে তারেক রহমান পাননি। এবং যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, তাঁরাও ন্যায়বিচার পাননি। এই সাজা দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। আমরা আপিল করব। আপিলে ইনশাআল্লাহ সর্বোচ্চ আদালতে আমরা খালাস পাব।’
অপর এক প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবী সানাউল্লা মিয়া বলেন, ‘এটায় ১৯ জনের ফাঁসি হয়েছে, এখানে তারেক রহমানসহ বিএনপির যেসব নেতাকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। হাওয়া ভবন এবং আবদুস সালাম পিন্টুর বাসা থেকে কোনো সাক্ষী এসে এই মামলায় সাক্ষ্য দেয় নাই। তারা ওইখানে বইসা গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করেছে, এটার কোনো সাক্ষী নাই। আমরা ন্যায়বিচার পাই নাই।’
‘আর মুফতি হান্নান চারশ দিন রিমান্ডে যে জবানবন্দি দিয়েছে, সেই জবানবন্দি সে প্রত্যাহার করে বলেছে, তারেক রহমানের সঙ্গে, বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তার কোনোদিন দেখাই হয় নাই। অথচ আজকে অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। বিএনপির বহু নেতাকে, আমাদের আবদুস সালাম পিন্টুকে এই মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।’
সানাউল্লাহ মিয়া আরো বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, এই মামলায় তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতারা খালাস হবেন। এবং আপনারা মনে রাখবেন, এই মামলায় বিএনপির আমলে যে তদন্ত করেছে, সেই তদন্তের ভিত্তিতেই মুফতি আবদুল হান্নান এবং অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতেই এই মামলার সাক্ষী হয়েছে। কোনো সাক্ষী বলে নাই, তারেক রহমান কোনো ধরনের ধরনের ষড়যন্ত্র করেছে, কোনো গোপন বৈঠক করেছে, অথচ তাঁকে আজকে অন্যায়ভাবে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার পাই নাই।’
আইনজীবী আরো বলেন, ‘লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টু, হারিছ চৌধুরী, তারেক রহমান কোনো অন্যায় করেন নাই। এই দেশে, এই দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য, স্বাধীনভাবে দেশ পরিচালনা করার জন্য, আইনের শাসনের জন্য, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য তারেক রহমান আজীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছে, আরো করে যাবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া আরো বলেন, ‘তারেক রহমান যখন বাংলাদেশে ফিরে আসবেন, আমরা অবশ্যই এ মামলায় ইনশাআল্লাহ আপিল করব। তারেক রহমান নির্দোষ হবে।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলটির সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।