স্কাইপেতে খাসোগি হত্যার নির্দেশ দেন যিনি
সৌদি যুবরাজের সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো চালাতেন তিনি। গত বছর থেকে এ পর্যন্ত কয়েকশ সৌদি অভিজাত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার কার্যক্রমে পেছন থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। যিনি লেবাননের একজন প্রধানমন্ত্রীকেও আটক করেন, তিনিই স্কাইপেতে বসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনা দেন। দুজন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমনটি জানিয়েছে।
স্কাইপের ওপারে বসে থাকা ব্যক্তি হলেন সৌদি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সৌদ আল-কাহতানি, যাকে এরই মধ্যে খাসোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে।
কাহতানি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিশেষ ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডে নিয়োজিত ১৫ জনের সৌদি দলের চারজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং মোট ১৮ জন সৌদি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবরে জানিয়েছে সৌদি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।
কাহতানিকে এই হত্যাকাণ্ডের হোতা প্রমাণ করতে সৌদি কর্তৃপক্ষ তাঁকে বরখাস্ত করলেও গত তিন বছরে কাহতানির উত্থান ও যুবরাজের সঙ্গে সখ্যর বিষয়টি লুকানো সম্ভব হচ্ছে না, ফলে এ হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজের সংশ্লিষ্টতাও ঢাকা সম্ভব হচ্ছে না।
কাহতানি এর আগে অবশ্য বলেছিলেন, তিনি তাঁর বসের (মোহাম্মদ বিন সালমান) অনুমতির বাইরে কিছুই করেন না। কিছুদিন টুইট বার্তায় তিনি বলেন, বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আজ্ঞার বাইরে তিনি আসলে কিছুই করেন না।
এ যাত্রায় যদি যুবরাজকে রক্ষা করা যায়ও তবে তাঁর ভাবমূর্তিতে যে দাগ পড়েছে, তা মুছতে বেশ সময় লেগে যাবে। সৌদি রাজকীয় আদালতের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সূত্রে রয়টার্স এমনটি বলছে।
কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে হোয়াইট হাউসের বাইরে সৌদি আরবের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবিতে এক বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন সাংবাদিক জামাল খাসোগির ছবিওয়ালা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। ছবি : রয়টার্স
হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সৌদি আরব বরাবরই বলছে, যুবরাজ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছুই জানতেন না এবং তিনি কাউকে অপহরণ বা হত্যার নির্দেশও দেননি।
বরখাস্তের পর অবশ্য কাহতানির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর টুইটারে ব্যক্তিগত তথ্যে পদবির জায়গায় গত দু-তিন দিন আগে রাজতন্ত্রের উপদেষ্টা পদ সরিয়ে দিয়ে নিজেকে ‘সৌদি ফেডারেশন অব সাইবার সিকিউরিটি, প্রোগ্রামিং অ্যান্ড ড্রোনস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করে রেখেছেন।
গত বছর লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল হারিরিকে অপহরণ ও জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায়ও নেতৃত্ব দেন এই সৌদ আল-কাহতানি। সে ঘটনায়ও লেবাননের প্রধানমন্ত্রীকে অপহরণ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং সে সময় তাঁকে মারধরও করা হয়।
অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আজ মঙ্গলবার খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘নগ্নসত্য’ প্রকাশ করে দেবেন বলে জানিয়েছেন। রয়টার্স তুরস্কের উচ্চ পর্যায়ের অনেক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে সে সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করলেও এরদোয়ানের সংবাদ সম্মেলনের আগে কেউ মুখ খোলেননি।
গত ২ অক্টোবর বিয়ের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর আর খোঁজ মেলেনি স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী হওয়া খাসোগির। বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর বাগদত্তা তুর্কি নারী জেঙ্গিস হেতিজে। তিনি গণমাধ্যমকে খাসোগি নিখোঁজের বিষয়টি জানান।
ঘটনার পর তুরস্ক তদন্ত শুরু করে। তারা দাবি করে, খাসোগিকে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে সৌদি আরব তা প্রত্যাখ্যান করে বলতে থাকে খাসোগি কনস্যুলেট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ হয়েছেন।
প্রায় দুই সপ্তাহ এ নিয়ে উভয় পক্ষের দিক থেকে বিপরীতমুখী বক্তব্য আসতে থাকে। তুরস্ক কনস্যুলেটের ভেতরে হত্যাকাণ্ডের প্রমাণে অডিও রয়েছে বলে জানায় এবং ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে। পরে সৌদি আরব হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করে নেয়। তবে এখন পর্যন্ত তাঁর মরদেহ কোথায় রাখা হয়েছে বা কী করা হয়েছে, জানায়নি সৌদি আরব।