নির্বাচন চাই, সংঘাত-রক্তপাত-প্রাণহানি নয় : সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ‘আমরা চাই একটি নির্বাচন। আমরা চাই না সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো সংঘাত হোক এবং সেখানে কোনোরকম রক্তপাত হোক অথবা প্রাণহানি হোক।’
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তিন দিনব্যাপী ব্রিফিংয়ের শেষ দিনের কার্যক্রম উদ্বোধনকালে সিইসি এ কথা বলেন।
নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘এবারের নির্বাচন কোনোভাবেই যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে জন্য আচরণবিধি অনুযায়ী দৃঢ়ভাবে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।’
সিইসি বলেন, ‘এই ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে আপনাদের অবস্থান আমরা জানলাম। আমাদের অবস্থানও আপনারা জানলেন। আমাদের অবস্থান হলো আমরা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চাই। অবাধ মানে ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাবে, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়িতে যাবে এবং বাড়িতে গিয়ে নিরাপদে বসবাস করবেন। আর চারদিকের পরিবেশ নিরাপদ রাখার দায়িত্বে আপনারা থাকবেন।’
কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচনের দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। সেদিনটা আপনাদের অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক সময় আপনাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। আপনাদের বিচলিত করে, অনেক সময় আপনাদের নানা কারণে উসকানিমূলক পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। আপনাদের মিসগাইডিংয়ের মধ্যে ফেলে দেয়। সেই সমস্ত অবস্থা আপনাদের বুদ্ধিমত্তা, দক্ষতা, ক্ষিপ্রতার মাধ্যমে এগুলো বুঝতে হবে যে, আসলে অবস্থা কী?’
‘কোন ঘটনা সত্য বা মিথ্যা, তা আপনাদের বুঝতে হবে। আধুনিক এই যুগে কেন্দ্র, প্রিসাইডিং অফিসার, আপনাদের সহকর্মী যাঁরা থাকবেন, তাঁদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ থাকতে হবে। যাতে তাৎক্ষণিকভাবে সেই এলাকার অবস্থা জানতে পারেন।’
‘এ দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আপনাদের কাজ, যাঁরা দেশের শাসনভার গ্রহণ করবেন। যাঁরা মহান জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। যাঁরা মন্ত্রী, স্পিকার হয়ে দেশ পরিচালনা করবেন। নির্বাচনে যাঁরা অংশগ্রহণ করবেন, তাঁরা প্রত্যেকে সম্মানিত ব্যক্তি। আমি জানি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা আপনাদের কখনো বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলবেন না। তাঁদের ওপর আস্থা রাখবেন, তাঁদের কথা শুনতে হবে।’
সিইসি বলেন, ‘কখনো ধৈর্যচ্যুত হলে চলবে না। কোনো বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে সহনশীল থাকতে হবে এবং বুঝে, জেনে, শুনে অ্যাকশনে যেতে হবে। চরম অ্যাকশন যেটা বলা হয়, সেটাকে যতদূর পারেন আপনারা নিজেদের বিবেচনায় সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ যদি করতে পারেন, তাহলে পরিবেশ-পরিস্থিতি শান্ত হবে।’
‘আমরা চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরা চাই একটা নির্বাচন। আমরা চাই না সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো সংঘাত হোক এবং সেখানে কোনোরকম রক্তপাত হোক অথবা প্রাণহানি হোক। এগুলোকে সামলানোর জন্য, দেখভাল করার দায়িত্ব আপনাদের। নির্বাচনের দিন, নির্বাচনের আগে এবং পরে এই সময় আপনাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে থাকতে হবে। তাদের পরিচালনার দায়িত্বে আপনাদের থাকতে হবে।’
সিইসি আরো বলেন, ‘আচরণবিধি ভালোভাবে রপ্ত করবেন। আচরণবিধি প্রয়োগ করতে গিয়ে যেন এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে একটা নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বারবার বলি আপনারা বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট। সুতরাং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আপনাদের কাজ করতে হবে। যাতে কখনো নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি ব্যাহত হয়।’
‘সবচেয়ে বড় কথা, আমরা নির্বাচন করব। নির্বাচন উঠিয়ে নিয়ে আসব। সেখানে সেই পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এই দায়িত্বটুকু আপনাদের পালন করতে হবে। সেটা পালন করতে হবে দক্ষতার সঙ্গে, জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে এবং পালন করতে হবে আচরণবিধি এ সংক্রান্ত কিছু আইনের ধারা আয়ত্তের মাধ্যমে।’
কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। আমরা সেটাকে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। নিরপেক্ষতা থাকতে হবে এবং ক্ষিপ্রতা থাকতে হবে। কখনো নিজেদের আইনকানুনের অবস্থান থেকে চ্যুত হবেন না এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো, আপনাদের ধৈর্যসহকারে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। কাউকে বিরক্ত করে বা বিরাগভাজন হয়ে নয়।’