প্রত্যেকবার দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত
দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, ‘প্রত্যেকবার দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। এতে সহিংসতা অনেক কমে আসে। সবাই সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে। যা অতীতে হয়নি।’
১৯৯১ সাল থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সহিংসতার মাত্রা ছিল অনেক বেশি। সেই তুলনায় এবারে তেমনটা শোনা যায়নি। তাই ভবিষ্যতেও দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হওয়ার দরকার বলে মনে করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাজী রিয়াজুল হক এ কথা বলেন। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচনে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছে। হতাহতের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।’
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘ভোটের আগে, ভোটের দিন ও ভোট-পরবর্তী সময়ে নিহতের কোনো খবর আমরা পাইনি। গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা ১৪ জন নিহত হওয়ার সংবাদ জেনেছি। শতাধিক লোক আহত হয়েছে সেটিও জেনেছি। তবে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগও করেনি। ভোটের আগে কিছু অভিযোগ ছিল। এরপরও কেউ নির্বাচন থেকে দূরে সরে যায়নি। ফলে একটি অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
এবারের নির্বাচনে নারী ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পেরেছে উল্লেখ করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘যার ফলে ২২ জন নারী সরাসরি নির্বাচিত হয়েছেন। ৮০ শতাংশ ভোটগ্রহণ থেকে বোঝা যায় অন্যান্য যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে।’
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, নির্বাচনের পূর্ববর্তী, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন-পরবর্তী তিন সময়ে আমাদের কন্ট্রোল রুমে মোট ৫২টি অভিযোগ পড়েছে। অভিযোগগুলো ভয়ভীতিজনিত কারণ, কেন্দ্রে যেতে না দেওয়া, প্রাণনাশের হুমকি ইত্যাদি ছিল। আমরা বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছি। নির্বাচন কমিশন সবকিছুর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়।
ভোটকেন্দ্রের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঢাকার আমি অনেকগুলো কেন্দ্র ঘুরেছি। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ছিল না। ভোটাররা ভোট দিতে পারছে না এমনটা দেখিনি। দু-একটি কেন্দ্রে এজেন্ট না থাকলেও বাকি সব কেন্দ্রে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্ট দেখতে পেয়েছি।’
নির্বাচনে মহাজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের নজিরহীন ব্যবধান প্রসঙ্গে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘এর কারণ আমি বলতে পারব না। তবে ভোটের ব্যবধান এত বেশি কেন হলো এটা নিয়ে একটা গবেষণা হতে পারে। এটা গবেষণা করে দেখা উচিত।’
নোয়াখালীতে ভোটের পরে এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের উত্তরে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘গণমাধ্যমের মাধ্যমে তা আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করব।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা স্বচ্ছন্দে থাকার কারণে সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর সবাই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে মতামত প্রকাশ করতে পেরেছে। অতীতের কোনো নির্বাচনে এত সংখ্যালঘু ভোট কেন্দ্রে যায়নি।’