এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় মাশরাফির
দাপুটে ক্রিকেট খেলেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে জায়গা করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বের প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই রেখেছিল পরিপক্বতার ছাপ। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে নিজেদের আরো উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় সফল না হলেও হতাশ হচ্ছেন না মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশের ক্রিকেট এখান থেকেই আরো এগিয়ে যাবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
মেলবোর্নে ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে ‘বিতর্কিত’ আম্পায়ারিংয়ের জন্য। মাঠের ও থার্ড আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে জীবন পেয়েছেন সুরেশ রায়না ও সেঞ্চুরি হাঁকানো রোহিত শর্মা। এই দুজনের ব্যাটে ভর করেই ভারত সংগ্রহ করেছিল ৩০২ রান। ভাগ্য বিরূপ হওয়ায় শুরুতে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সুযোগও পায়নি বাংলাদেশ। মাশরাফি অবশ্য ম্যাচ শেষে এসব নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি বলেছেন, ‘টসটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরাও আগে ব্যাট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। ৩০০ রান তাড়া করা সব সময়ই কঠিন। ২৮০ রান হলে ঠিক ছিল।’
২৮০ না, হয়তো তারও কমে আটকে রাখা যেত ভারতকে। ৩৪তম ওভারে মাশরাফির বলে সুরেশ রায়না এলবিডব্লিউর হাত থেকে বেঁচে গেছেন বলটি কয়েক সেন্টিমিটার এদিক-ওদিক হওয়ার কারণে। মাশরাফির বলটা পিচ করেছিল লেগসাইডের সামান্য বাইরে। সে সময় রায়না ছিলেন ১০ রানে। পরে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৬৫ রান। ৯০ রানে আম্পায়ারদের কল্যাণে জীবন পাওয়া রোহিত করেছেন ১৩৭ রান। ৩০৩ রানের দুরূহ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহও সাজঘরে ফিরেছেন থার্ড আম্পায়ারের ‘বিতর্কিত’ সিদ্ধান্তের বলী হয়ে। মাঠের লড়াইয়ে ১০৯ রানের বড় ব্যবধানে হারলেও বাংলাদেশের সমর্থকদের খুশি করতে পেরেছেন বলেই মনে করেন মাশরাফি, ‘এই ম্যাচটা ছাড়া বাকি সবকিছু নিয়ে দেশের মানুষের খুশিই হওয়া উচিত। আমাদের দলের অনেকেই বিশ্বকাপের আগে মাত্র দুই বা তিনটা ওয়ানডে খেলেছে। তারা তাদের ক্যারিয়ার শুরু করছে কেবল।’
এ রকম একটা তরুণ দল নিয়েও যে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছে তা বেশ বড় অর্জনই বলতে হয়। আর এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে মাশরাফি তাকিয়ে আছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে। এখান থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেট আরো সামনে এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য মাশরাফির, ‘আশা করছি আমরা এখান থেকেই আরো সামনে এগিয়ে যেতে পারব। আমাদের এই ধরনের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা খুব বেশি ছিল না। কিন্তু এখন আমরা জানি যে কোথায় কীভাবে খেলতে হবে।’
১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে গিয়েছিল টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির পথে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে শোনা গিয়েছিল সাকিব-তামিম-মুশফিকদের মতো তারকাদের আগমনধ্বনি। সেবার ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ পেরিয়েছিল গ্রুপ পর্বের বাধা। খেলেছিল সুপার এইট পর্বে। এবারের বিশ্বকাপে আরো একধাপ এগিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার মধ্য দিয়ে সত্যিই হয়তো সূচনা হবে সাফল্যমণ্ডিত এক নতুন অধ্যায়ের। মাশরাফির কথা সত্যি হোক, সেটা নিশ্চয়ই মনপ্রাণ দিয়ে চাইবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।