আপিল করবে বিসিবি
আম্পায়ারিংয়ের বলি হয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। মাশরাফির বলে এলবিডব্লিউর রিভিউ, বিতর্কিত নো বল ডেকে রুবেলকে রোহিত শর্মার উইকেট থেকে বঞ্চিত করা, বাংলাদেশের পক্ষে টানা দুই ম্যাচে শতক করা মাহমুদউল্লাহর বিতর্কিত ক্যাচ—এভাবে পুরো ম্যাচেই বারবার হতাশ আর ক্ষুব্ধ হতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
ভারতকে শিরোপা জয়ের দৌড়ে টিকিয়ে রাখার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সুবিধা দেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্ন উঠেছে জোরেশোরেই। আইসিসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল, আম্পায়ারদের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।
আইসিসির কাছে বিতর্কিত এসব সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান। বৃহস্পতিবার ম্যাচ শেষে তিনি বলেছেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিবেদনে এসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা ফলাফল বদলাতে পারবে না। কিন্তু একটা ভুল সিদ্ধান্ত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের মতো ম্যাচে অনেক বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমি আইসিসির সভাপতির (মুস্তফা কামাল) সঙ্গে আলোচনা করেছি। আইনিভাবে যা করার দরকার, আমরা করব।’
ভারতের ইনিংসের ৪০তম ওভারে রুবেল হোসেনের বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। বলটা নিচের দিকে থাকার পরও সেটাকে কীভাবে নো বল ডেকে রুবেলকে উইকেটবঞ্চিত করা হলো, তা ভেবে পাচ্ছেন না অনেকেই। বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার আতহার আলী ক্ষুব্ধভাবে বলেছেন, ‘আমি স্তম্ভিত। বিশ্বাসই করতে পারছি না, লেগ আম্পায়ার কীভাবে এটাকে নো বল ডাকলেন! কেউ এটা নিয়ে কোনো কথা বলছে না কেন?’
কথা অবশ্য অনেকেই বলেছেন। শেন ওয়ার্ন, ভিভিএস লক্ষ্মণ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ভারতের একটি অনলাইন পোর্টালে বলা হয়েছে, ‘শতক করতে পারার জন্য রোহিত শর্মার ধন্যবাদ দেওয়া উচিত আম্পায়ারদের।’ ৯০ রানে ‘জীবন’ পেয়ে ভারতীয় এই ওপেনার শেষ পর্যন্ত করেছিলেন ১৩৭ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারাও এটাকে ‘বাজে সিদ্ধান্ত’ বলেছেন।
শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আইসিসিকে ডেকেছিলেন ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম কাউন্সিল’ নামে। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘এখন আর কোনো আইসিসি নেই। এটা শুধুই বিসিসিআই (ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড)। এটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল নয়, এটা আন্তর্জাতিক ক্রাইম কাউন্সিল। আমি নিশ্চিত, অন্য সব দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতিরা সেখানে পুতুলমাত্র। আইসিসি হলো দন্তহীন বাঘ।’
কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে বিশ্বকাপের স্বপ্নপূরণ করেছে বাংলাদেশ। নিজেদের আরেকটু উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় সফল হতে না পারলেও আক্ষেপ থাকার কথা নয় বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনের। তবে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসিতে ভারতের আধিপত্য এবং সবকিছু নিজেদের পরিকল্পনামাফিক পরিচালনা করার বিরুদ্ধে জোর আওয়াজ উঠতে পারে সাম্প্রতিক সব ঘটনার কারণে। ক্রিকেটকে আরো জনপ্রিয় করে তোলার স্বার্থে সেটা হয়তো জরুরিও।