ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে শেষ চারে নিউজিল্যান্ড
মার্টিন গাপটিলের রেকর্ডগড়া ডাবল সেঞ্চুরি আর পেসার ট্রেন্ট বোল্টের তোপ চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে সহজ জয় এনে দিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৩ রানে উড়িয়ে দেওয়া কিউরা সেমিফাইনালে খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ম্যাচটা হবে আগামী মঙ্গলবার, অকল্যান্ডে।
শনিবার ওয়েলিংটনের ওয়েস্টপ্যাক স্টেডিয়ামে ৩৯৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আশার আলো দেখাচ্ছিলেন ক্রিস গেইল। কিন্তু ৩৩ বলে আটটি ছক্কা ও দুটি চারে ৬১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলা এই দীর্ঘ ওপেনারকে অ্যাডাম মিল্ন বোল্ড করার সঙ্গে সঙ্গে ক্যারিবীয়দের চমকজাগানো কিছুর সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায়।
গেইলের আগেই জনসন চার্লস, লেন্ডল সিমন্স, মারলন স্যামুয়েলস আর দীনেশ রামদিনকে আউট করেন বোল্ট। সপ্তদশ ওভারের প্রথম বলে গেইলের বিদায়ে স্কোর দাঁড়ায় ১২০/৫।
ষষ্ঠ উইকেটে ৪৬ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন ড্যারেন স্যামি (২৭) ও জোনাথন কার্টার (৩২)। তবে ২২ ও ২৩তম ওভারে ফিরে যান দুজনেই। এরপর অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ২৬ বলে ৪২ রান করলেও ৩০.৩ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
৪৪ রানে চার উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সেরা বোলার বোল্ট। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন টিম সাউদি ও ড্যানিয়েল ভেট্টরি।
এর আগে রেকর্ডগড়া ডাবল সেঞ্চুরি করে নিউজিল্যান্ডকে রানের ‘পাহাড়ে’ তুলে দেন গাপটিল। এই ডানহাতি ওপেনারের ১৬৩ বলে অপরাজিত ২৩৭ রানের অসাধারণ ইনিংস বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকদের এনে দেয় ৬ উইকেটে ৩৯৩ রানের বিশাল সংগ্রহ।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে জ্বলে উঠতে পারেননি নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ফিরে যান মাত্র ১২ রান করে। আর কেউ ফিফটিও করতে পারেননি। তবে গাপটিলের ব্যাটের তাণ্ডবেই উড়ে গেছে ক্যারিবীয়রা। বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসটা সাজানো ছিল ১১টি ছক্কা ও ২৪টি চারে। ওয়ানডের সেরা টুর্নামেন্টে আগের সেরা ইনিংসের জন্ম এই বিশ্বকাপেই। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৫ রান করে বিশ্বকাপে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল।
ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের তালিকায় এখন গাপটিলের নাম দ্বিতীয় স্থানে। তাঁর আগে আছেন শুধু ভারতের রোহিত শর্মা (২৬৪)। রোহিত অবশ্য আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরি (২০৯) করেছেন। ওয়ানডেতে এই বিরল কীর্তি আছে আর মাত্র দুজনের- ভারতের ব্যাটিং-কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার (২০০) এবং তাঁর দীর্ঘ দিনের সতীর্থ বীরেন্দর শেবাগের (২১৯)।
পঞ্চম ওভারে ম্যাককালামকে আউট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভালো সূচনা এনে দেন পেসার জেরম টেলর। দ্বিতীয় উইকেটে ৬২ রানের জুটি গড়ে সেই ধাক্কা সামলে ওঠেন কেইন উইলিয়ামসন ও গাপটিল। ষোড়শ ওভারের শেষ বলে এই জুটি ভেঙে দেন আন্দ্রে রাসেল, ৩৫ বলে ৩৩ রান করে গেইলের হাতে ক্যাচ দেন উইলিয়ামসন। এরপর শুধু গাপটিল ‘মহাকাব্য’। নিউজিল্যান্ডের প্রায় ৪০০ রানের ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২ রান রস টেলরের।
এই তথ্যেই পরিষ্কার, কতটা ‘গাপটিলময়’ ছিল কিউইদের ব্যাটিং।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৯৩/৬ (গাপটিল ২৩৭*, ম্যাককালাম ১২, উইলিয়ামসন ৩৩, টেলর ৪২, অ্যান্ডারসন ১৫, এলিয়ট ২৭, রনকি ৯, ভেট্টরি ৮*; টেলর ৩/৭১, রাসেল ২/৯৬)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩০.৩ ওভারে ২৫০ (গেইল ৬১, চার্লস ৩, সিমন্স ১২, স্যামুয়েলস ২৭, রামদিন ০, কার্টার ৩২, স্যামি ২৭, রাসেল ২০, হোল্ডার ৪২, টেলর ১১, বেন ৯*; বোল্ট ৪/৪৪, ভেট্টরি ২/৫৮, সাউদি ২/৮২, অ্যান্ডারসন ১/২৪, মিল্ন ১/৪২)
ফল: নিউজিল্যান্ড ১৪৩ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: মার্টিন গাপটিল।