অবশেষে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড
এর আগে ছয়বার সেমিফাইনালে খেললেও বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা হয়নি। শেষ পর্যন্ত সপ্তম প্রচেষ্টায় সফল নিউজিল্যান্ড। রোমাঞ্চ আর নাটকীয়তায় ভরা প্রথম সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ডাকওয়ার্থ/লুইস পদ্ধতিতে ৪ উইকেটে হারিয়েছে কিউইরা।
মঙ্গলবার অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে বৃষ্টির কারণে ৪৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৯৮ রান। অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, কোরি অ্যান্ডারসন আর গ্র্যান্ট এলিয়টের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এক বল হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে দেয় কিউইদের।
ম্যাককালামের ৮টি চার ও চারটি ছক্কা সমৃদ্ধ ২৬ বলে ৫৯ রানের ঝড়ো ইনিংস চমৎকার সূচনা এনে দেয় বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকদের। তবে সপ্তম ও নবম ওভারে ম্যাককালাম ও কেইন উইলিয়ামসনকে (৬) আউট করে কিউইদের জোড়া ধাক্কা দেন মর্নে মরকেল। এর পর মার্টিন গাপটিল ও রস টেলর দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আগের ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করা গাপটিলের (৩৪) রানআউট এবং জেপি ডুমিনির বলে রস টেলর (৩০) কট বিহাইন্ড হলে আবার অস্বস্তিতে পড়ে যায় কিউইরা।
১৪৯ রানে চতুর্থ উইকেট পতনের পর অ্যান্ডারসন ও এলিয়টের ১০৩ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড। দুজনই অবশ্য ভাগ্যবান। এবি ডি ভিলিয়ার্সের ‘হাস্যকর’ ভুলে নিশ্চিত রান আউট থেকে বেঁচে গেছেন অ্যান্ডারসন। তেমনি ক্যাচ তুলে দিয়েও ডুমিনি ও বদলি ফিল্ডার ফারহান বেহারদিনের ‘সংঘর্ষ’ বাঁচিয়ে দিয়েছে এলিয়টকে।
অ্যান্ডারসন ৫৭ বলে ৫৮ রান করে বিদায় নিলেও এলিয়টকে দক্ষিণ আফ্রিকানরা ফেরাতে পারেনি। ডেল স্টেইনকে ছক্কা মেরে কিউইদের জয় উপহার দিয়েই মাঠ থেকে ফিরেছেন এলিয়ট। ৭৩ বলে ৭টি চার ও তিন ছক্কায় সাজানো অপরাজিত ৮৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের সুবাদে তিনিই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়।
এর আগে বৃষ্টির তাণ্ডবে প্রায় দুই ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকলে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে আনা হয় ৪৩ ওভারে। দারুণ ব্যাটিং করে দলকে ২৮১ রানের বড় সংগ্রহ এনে দেন ফাফ ডু প্লেসি, এবি ডি ভিলিয়ার্স ও ডেভিড মিলার। তবে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে নিউজিল্যান্ডের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৯৮ রান।
চতুর্থ উইকেটে ১০৩ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে দিয়েছিলেন ফাফ ডু প্লেসি ও ডি ভিলিয়ার্স। বৃষ্টি আসার আগে ৩৮ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ২১৬ রান সংগ্রহ করেছিল প্রোটিয়ারা। আবার খেলা শুরু হওয়ার পর, ৩৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কোরি অ্যান্ডারসনের শিকার হয়ে ফিরে যান ডু প্লেসি। তার আগে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান করেছিলেন ৮২ রান। ৪৫ বলে ৬৫ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। শেষ দিকে ডেভিড মিলারের ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে ৪৯ রানের ঝড়ো ইনিংস।
৩০ ওভার পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকাকে বেশ চাপের মধ্যে রেখেছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু এর পর উল্টো স্বাগতিকদেরই চেপে ধরেন ফাফ ডু প্লেসি ও অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স।
টস জিতে শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু যে পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করেছিলেন, তা সফল হয়নি কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্টের তোপে। বিশ্বকাপের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে ভালো বল করা বোল্ট শুরুতেই আঘাত হানেন দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে।
দলীয় ২১ রানের মাথায় বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে ফেরান হাশিম আমলাকে। প্রোটিয়াদের অর্ধশতক পূরণ হওয়ার আগে আবারও আঘাত হানেন বোল্ট। ৩১ রানের মাথায় তাঁর বলে সাউদিকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন কুইন্টন ডি কক। এবারের বিশ্বকাপে এটা বোল্টের ২১তম উইকেট। এক বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব এখন এই ডানহাতি পেসারের অধিকারে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ২০ উইকেট নিয়ে আগের ‘রেকর্ড’টা ছিল বাঁ-হাতি পেসার জিওফ অ্যালটের।
তখন দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ মাত্র ৩১ রান। ব্যাটিং বিপর্যয় কাটাতে লড়ছিলেন রিলি রুসো ও ফাফ ডু প্লেসি। দলীয় ১১৪ রানের মাথায় তাঁদের ৮৩ রানের জুটি ভাঙেন কোরি অ্যান্ডারসন। রুসোর সম্ভাবনাময় ইনিংসটি ৩৯ রানেই থামিয়ে দেন এই বাঁ-হাতি পেসার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৪৩ ওভারে ২৮১/৫ (আমলা ১০, ডি কক ১৪, ডু প্লেসি ৮২, রুসো ৩৯, ডি ভিলিয়ার্স ৬৫*, মিলার ৪৯, ডুমিনি ৮*; অ্যান্ডারসন ৩/৭২, বোল্ট ২/৫৩)
নিউজিল্যান্ড : ৪২.৫ ওভারে ২৯৯/৬ (গাপটিল ৩৪, ম্যাককালাম ৫৯, উইলিয়ামসন ৬, টেলর ৩০, এলিয়ট ৮৪*, অ্যান্ডারসন ৫৮, রনকি ৮, ভেট্টরি ৭* ; মরকেল ৩/৫৯, ডুমিনি ১/৪৩, স্টেইন ১/৭৬)
ফল : নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : গ্র্যান্ট এলিয়ট।