সিটি নির্বাচনে স্থগিত তিনদিনের পরীক্ষা
তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ এপ্রিলের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আজ রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা-সংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ওই বৈঠক শেষ হয়। বৈঠকে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১২ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিরোধী জোট হরতাল-অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচি দেবে না। এ কর্মসূচি থেকে বিরত থাকলে তারা দেশবাসীর ধন্যবাদ পাবে। তিনি বলেন, হরতাল থাকলেও এবার সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা হবে।
এর আগে ২৩ মার্চ এনটিভি অনলাইনে ‘পরীক্ষার দিন সিটি নির্বাচন, পাল্টাতে হবে সূচি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র ঢালী এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষা আগামী ১ এপ্রিল থেকেই শুরু হবে। এর মধ্যে ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের দিনও পরীক্ষার সূচি নির্ধারিত রয়েছে। যেহেতু সময়সূচির পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেহেতু পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’
আজ রোববার এক বৈঠকে ২৬, ২৭ ও ২৮ এপ্রিলের পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী, ২৮ এপ্রিল সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের দুটি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এর মধ্যে সকাল ১০টা থেকে মনোবিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) প্রথম পত্র এবং দুপুর ২টা থেকে চারু ও কারুকলা (তত্ত্বীয়) প্রথম পত্র পরীক্ষার সময় নির্ধারিত রয়েছে।
২৬ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে নির্ধারিত ছিল পৌরনীতি ও সুশাসন দ্বিতীয় পত্র, পৌরনীতি দ্বিতীয় পত্র, জীববিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) দ্বিতীয় পত্র, ব্যবসায় উদ্যোগ ও ব্যবহারিক ব্যবস্থাপনা দ্বিতীয় পত্র; ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা দ্বিতীয় পত্র এবং ইংরেজি শর্টহ্যান্ড (তত্ত্বীয়) প্রথম পত্র।
একই দিন বিকেলে ছিল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র এবং উচ্চাঙ্গসংগীত (তত্ত্বীয়) দ্বিতীয় পত্র।
২৭ এপ্রিল ছিল কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কৃষিশিক্ষা প্রথম পত্র, পরিসংখ্যান প্রথম পত্র, উচ্চতর প্রকৌশল অঙ্কন ও জরিপ বিজ্ঞান প্রথম পত্র।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধের কারণে ২০১৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা পিছিয়েছে অনেকবার। প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর এ পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত তারিখ ছিল ২ ফেব্রুয়ারি। বারবার পিছিয়ে দেওয়ার কারণে দেড় মাসের বেশি সময়ে পরীক্ষা শেষ হয়নি। এর মধ্যেই ১ এপ্রিল শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা।
হরতাল-অবরোধের কারণে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কায় ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্যও পিছিয়ে দেওয়া হলো এ পরীক্ষা।
গত ১৮ মার্চ ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আসছে ২৮ এপ্রিল তিন সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণ করা হবে।
সিইসি জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রগুলো গোছানোর জন্য এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচনের আগে কয়েক দিন সময় দরকার কমিশনের।
এর আগে গত ১২ মার্চ সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নির্বাচনের বিষয়ে কথা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য আমরা গ্যাপ খুঁজছিলাম। সে জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, হরতাল হলে ওনারা রিস্ক নিচ্ছেন না। হরতাল থাকলে শুক্র-শনিবার পরীক্ষা নিচ্ছেন। তো, এ রকম পরিস্থিতি চললে পরে আমরা শুক্র-শনিবার অ্যাভয়েড করব। ওনাদের শুক্র-শনিবার ছেড়ে দেব।’