প্রচারে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক মেয়র বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী এম মনজুর আলম এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারের কাজ শুরু করেছেন। আজ মঙ্গলবার শুরু করা প্রচারে দুই প্রার্থীই বন্দরনগরীর জলাবদ্ধতা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম নাগরিক উন্নয়ন আন্দোলন সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী এম মনজুর আলমের পক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর ঈদগাহ নয়াবাজার এলাকায় পথসভা করেছে বিএনপি। পথসভা শেষে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান। সভায় আবদুল্লাহ আল নোমান সাবেক মেয়র মনজুরের ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়ন তুলে ধরেন।
এ ছাড়া উন্নয়ন আন্দোলন কমিটির প্রধান কার্যালয়ে মেয়র পদপ্রার্থী মনজুর আলমের সাথে মতবিনিময় করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সভায় আবদুল্লাহ আল নোমানও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুরে উন্নয়ন আন্দোলন কমিটির কার্যালয় থেকে নির্বাচনী প্রচারের কাজ শুরু করেন মনজুর আলম।
এদিকে নাগরিক কমিটির ব্যানারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিন। আওয়ামী লীগও তাঁকে সমর্থন দিয়েছে। আজ সন্ধ্যায় মোমিন রোডে নাগরিক কমিটির প্রধান কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ ওই কার্যালয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সভা করেন। পরে সেখানে নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে মেয়র পদপ্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
প্রতিশ্রুতিতে প্রাধান্য পেল জলাবদ্ধতা
নির্বাচনী প্রচারের প্রথম দিনই উভয় প্রার্থীর মুখেই স্থায়ীভাবে নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করা প্রতিশ্রুতির কথা উঠে এসেছে। এম মনজুর আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রায় চার হাজার প্রকল্প নিয়ে ৪১টি ওয়ার্ডে উন্নয়ন কাজ করেছি। তাই বিচারের ভার নগরবাসীর। জলাবদ্ধতা নিরসনে বহদ্দারহাট থেকে নতুন খাল খনন করে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি সরকার অনুমোদন দিলেও এখনো অর্থছাড় দেয়নি। এ প্রকল্পের অর্থ সরকার ছাড় করলে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব।’
মনজুর আলম আরো জানান, ব্যর্থতা নয়, সরকারের অসহযোগিতার মধ্যেও যে কোনো সময়ের চেয়ে তিনি চট্টগ্রামের বেশি উন্নয়ন করেছেন। বিগত নির্বাচনে জয়লাভ করে পাঁচ বছরে দলমতনির্বিশেষ চট্টগ্রামের উন্নয়নে কাজ করেছেন বলে দাবি করেন মনজুর আলম। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের ৫৫ জন কাউন্সিলর নিয়ে ৪১টি ওয়ার্ডে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার কাজ করেছেন, যা বিরাট সাফল্য বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো জানান, বিগত ২০ বছরে এখানে উন্নয়নে ব্যয় হয়েছিল এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সেখানে তিনি গত চার বছরে ৯০০ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছেন।
তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে সাবেক মেয়র মনজুর আলম বিগত পাঁচ বছরে ব্যর্থ হয়েছেন বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আ জ ম নাছির। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আ জ ম নাছির চট্টগ্রাম থেকে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনের মিশন নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দেন।
আ জ ম নাছির অভিযোগ করেন, সদ্য বিদায়ী মেয়র জলাবদ্ধতার মিশনকে লক্ষ্য করে নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছর অতিক্রম করেছেন। এরই মধ্যে জলাবদ্ধতা নগরীতে প্রকট ও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মেয়র নির্বাচিত হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পুরোপুরি জলাবদ্ধতা নিরসনে আশাবাদী নাছির। তিনি আরো বলেন, ‘জনগণের ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হলে স্বচ্ছতার মাধ্যমে ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে চট্টগ্রাম মহানগরকে একটি দৃষ্টিনন্দন আধুনিক নগরে রূপান্তর করব।’
সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম দায়িত্ব পালনের সময় সরকারের সহযোগিতা পাননি, সাংবাদিকদের এ রকম প্রশ্নের জবাবে আ জ ম নাছির বলেন, ‘জানামতে, প্রায় চার বছর পর জনগণের চাপের মুখে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সেই প্রকল্প যথারীতি খুব দ্রুত সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন হয়েছে। এখানে সরকারের কোনো সীমাবদ্ধতা বা ব্যর্থতা ছিল না।’
এদিকে নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু থেকে মাইক ব্যবহারসহ আচরণবিধি মেনে চলতে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর নজরদারির কথাও জানান তিনি।