আজই প্রাণভিক্ষা চাইতে হবে : স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না, সে ব্যাপারে আজকের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। না চাইলে যত দ্রুত সম্ভব রায় কার্যকর করা হবে বলে জানান তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
আসাদুজ্জামান খাঁন আরো বলেন, ‘আজকের মধ্যে ক্ষমা প্রার্থনার সিদ্ধান্ত নিলে তাঁর আবেদনটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। সে ক্ষেত্রে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে কি না, তা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। আর যদি কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষা না চান, তাহলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত তাঁর দণ্ড কার্যকর করা হবে।’
এ ছাড়া কিছুক্ষণের মধ্যে একজন ম্যাজিস্ট্রেট কামারুজ্জামানের কাছে যাবেন বলে জানান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। ম্যাজিস্ট্রেট কামারুজ্জামানের কাছে জানতে চাইবেন, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না। তাঁর সিদ্ধান্ত জানার পর পরবর্তী কার্যক্রম করা হবে।
কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করতে বিলম্ব করা হচ্ছে কি না—তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দাবি করেন, রায় কার্যকর করতে কোনো বিলম্ব করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে জেলকোড ও আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে। তবে ফাঁসির পর তাঁকে কোথায় দাফন করা হবে, তা তাঁর আত্মীয়স্বজনের ব্যাপার। কেউ বাধা দিলে সেটা মোকাবিলা করে কামারুজ্জামানকে কোথায় দাফন করবে, সেটা তাঁরাই বুঝবেন। এ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা একজন যুদ্ধাপরাধীকে দাফনের ক্ষেত্রে বাধা দিতেই পারেন। এ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো ভূমিকা নেবে না।
সকালে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে তাঁর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, চিন্তাভাবনার জন্য তিনি সময় চেয়েছেন। এ ছাড়া জামায়াত নেতাকে আইনি বিভিন্ন পরামর্শ দেন তাঁরা।
গতকাল বুধবার বিকেল ৪টা ৫২ মিনিটে হাইকোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে রায়ের অনুলিপি পৌঁছে দেন। এর পর বিকেল ৫টা ৫২ মিনিটে রায়ের অনুলিপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাবউজ্জামানসহ পাঁচ কর্মকর্তা। এদিন তাঁকে রায় পড়ে শোনানো হয়।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার যাবতীয় প্রস্তুতি গত সোমবারই (৬ এপ্রিল) নিয়ে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এদিন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।
২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। চলতি বছর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছায়। ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়।
২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।