দেখা হবে অন্য দুনিয়ায়, যেখানে রাজনীতি থাকবে না : বিদিশা এরশাদ
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে নিজের শোকের কথা লিখেছেন তাঁর সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদ।
আজ রোববার মর্মাহত বিদিশা এরশাদ নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে এরশাদের প্রতি গভীর ভালোবাসা জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন।
রোববার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে দেওয়া স্ট্যাটাসে বিদিশা এরশাদ লিখেছেন, ‘এ জন্মে আর দেখা হলো না। আমিও আজমির শরিফ আসলাম আর তুমিও চলে গেলে। এত কষ্ট পাওয়ার থেকে মনে হয় এই ভালো ছিল।’
‘আবার দেখা হবে হয়তো অন্য এক দুনিয়াতে, যেখানে থাকবে না কোনো রাজনীতি,’ যোগ করেন বিদিশা।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ রোববার সকাল পৌনে ৮টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।’
গত ২৬ জুন থেকে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি ছিলেন এইচ এম এরশাদ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। আশির দশকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আট বছর ক্ষমতায় থাকা সাবেক এই সামরিক শাসক একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এরশাদ মারা যাওয়ার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা দলের পক্ষ থেকে সিএমএইচে গণমাধ্যমের কাছে এরশাদের ব্যাপারে পরবর্তী কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন। এ সময় সেখানে জাতীয় পার্টির ঊর্ধ্বতন নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘আজ প্রথম জানাজা শেষে এরশাদের মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হবে। আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিরোধীদলীয় নেতার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।’
‘এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এরশাদের মরদেহ রাখা হবে দলীয় নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য। এরপর বাদ আসর বায়তুল মোকাররমে আবার একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ ফের সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হবে।’
বৃষ্টির কারণে আগামীকাল এরশাদের মরদেহ রংপুর নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান জাতীয় পার্টির মহাসচিব। তিনি আরো বলেন, ‘পরশু অর্থাৎ মঙ্গলবার হেলিকপ্টারে করে এরশাদের মরদেহ রংপুর নিয়ে যাওয়া হবে। বাদ জোহর রংপুর জেলা স্কুলের মাঠে এরশাদের শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।’
এদিনই এরশাদের মরদেহ ঢাকায় ফিরিয়ে এনে সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানান মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি আরো জানান, পরদিন অর্থাৎ বুধবার রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে এরশাদের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ রোববার সকাল পৌনে ৮টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।’
এর পরেই সকালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক দুটি শোকবার্তায় এরশাদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিগত শতাব্দীর আশির দশকে সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে টানা আট বছর রাষ্ট্রপতি পদে ছিলেন এরশাদ। নব্বইয়ের দশকের শেষে এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় নেন এই সামরিক শাসক।
মাঝখানে কিছুদিন কারাবাস করলেও প্রায় চার দশক নিজের রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন এরশাদ। বারবার জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন; সর্বশেষ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বর্ণময় চরিত্রের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলার দিনহাটায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। তিনি চট্টগ্রামের পূর্ব বাংলার রেজিমেন্টাল ডিপোর উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৬৬ সালে কোয়েটায় মর্যাদাপূর্ণ কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে উন্নত কোর্স সম্পন্ন করেন। শিয়ালকোটে একটি ব্রিগেডের সঙ্গে সেবা করার পর তাঁকে ১৯৬৯ সালে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ড এবং ১৯৭১ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ড দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধ শেষে এরশাদ পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। পরে তাঁকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল পদে নিযুক্ত করা হয়। ১৯৭৯ সালে তাঁকে সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের ফলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯৯১ সালে এরশাদ গ্রেপ্তার হন। ছয় বছর কারাভোগের পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন।
কারাগারে থেকে এরশাদ ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে নিজ জেলা রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন।
গণঅভ্যুত্থানে পতনের পরও এরশাদের দল জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদে উল্লেখযোগ্য আসনে বিজয়ী হয়। কমবেশি করে একই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল পরবর্তী সময়ের সাধারণ নির্বাচনেও। ২০০৬ সালে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের দল বিরোধী দলের ভূমিকায় উঠে আসে।