সেবার কাজীদার কাছে কোটি টাকা পাওনা দাবি লেখক হাকিমের
নামকরা পুস্তক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সেবা প্রকাশনী ও এর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কোটি টাকা পাওনার দাবি করলেন জনপ্রিয় লেখক শেখ আবদুল হাকিম।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘দিন যায় কথা থাকে’ শিরোনামে এক পোস্টে লেখক ইফতেখার আমিন সেবা প্রকাশনী ও কাজী আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন। সেসব অভিযোগকে ‘বর্ণে বর্ণে সত্যি’ বলে ইফতেখার আমিনের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন শেখ আবদুল হাকিম।
সম্প্রতি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘সেবা প্রকাশনীর স্বরূপ’ শিরোনামে দীর্ঘ পোস্টে শেখ আবদুল হাকিম বিস্তারিত অভিযোগ তুলে ধরেন কাজী আনোয়ার হোসেন ও তাঁর সেবা প্রকাশনীর বিরুদ্ধে।
হাকিমের অভিযোগ, ‘কাজী সাহেব আমাদের মতো লেখকদের বেআইনিভাবে শোষণ করছেন।’ তাঁর দাবি, ‘আমি ২৬০টার বেশি মাসুদ রানা লিখেছি, কুয়াশা সিরিজের বই লিখেছি ৪০ কি ৪২টা, আরো লিখেছি নিজেকে জানো সিরিজের গোটা দুই-তিন বই, রহস্যোপন্যাস গোটা আটেক, জুল ভার্নও পাঁচ-সাতটা অনুবাদ করেছি—সবই হয় কাজী আনোয়ার হোসেনের নামে, নয়তো তাঁর নিজের পছন্দের কোনো ছদ্মনামে (যেমন—বিদ্যুৎ মিত্র), তবে এসব বইয়ের একটারও কপিরাইট আমি কাজী সাহেবের কাছে বিক্রি করিনি।’ অথচ কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁকে বলেছেন, ‘আমরা তাঁর নামে কোনো বই বা মাসুদ রানা লিখিনি, সব তিনি লিখেছেন।’
হাকিম আরো লেখেন, ‘কাজী সাহেব একটা চুক্তিপত্রও দেখাতে পারবেন না যে আমি তাঁকে লিখিতভাবে কপিরাইট অধিকার দিয়েছি, যার বলে তিনি আমার লেখা একেকটা বই দশবার-বিশবার রিপ্রিন্ট করে গত চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পদের পাহাড় গড়বেন।’
ওই পোস্টে হাকিম আরো লেখেন, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্য জুলাই পর্যন্ত এক টাকাও রয়্যালটি হিসেবে পাননি। কপিরাইট অফিসেও অভিযোগ করেছেন লেখক। কাজী আনোয়ার হোসেনের কাছে ‘কমপক্ষে দুই কোটি ১২ লাখ টাকা’ পাবেন বলেও দাবি তাঁর।
শেখ আবদুল হাকিমের পোস্টে সেবা প্রকাশনী ও কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠার পর সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
শেখ আবদুল হাকিমের ফেসবুক পোস্ট :
এ প্রসঙ্গে এনটিভি অনলাইনকে জনপ্রিয় লেখক শেখ আবদুল হাকিম বলেছেন, ‘ফেসবুক স্ট্যাটাসে আমার যা বলার বিস্তারিত বলেছি। তিনি (কাজী আনোয়ার হোসেন) বলেন, আমাকে নাকি ভালোবাসেন। তাহলে আমার পাওনা দিচ্ছেন না কেন?’ হাকিম আরো বলেন, পাওনা আদায়ে কপিরাইট অফিস থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হাকিম বলেন, ‘আমি মামলা করব না। আর আমার সামর্থ্যও নেই। মামলা করলে আগেই করতে পারতাম। আমি শুধু আমার ন্যায্য পাওনা চাই। কপিরাইট অফিস থেকে এক কর্মকর্তা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। আশা করি ওরাই মামলা করবে।’
মামলার ব্যাপারে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট জাফর রাজা চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে আজ রোববার এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘আমরা কেন মামলা করতে যাব? আমরা মামলা করতে পারি না। এটি আধা বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান। এটা কি বাস্তব চিন্তা হতে পারে? কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করলে আমরা তার বিচার করতে পারি।’
জাফর রাজা চৌধুরী আরো জানান, তাঁর জানামতে লেখক শেখ আবদুল হাকিম বা তাঁর পক্ষ থেকে কপিরাইট অফিসে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তবে লেখক ইফতেখার আমিন কিছু ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন। এ কর্মকর্তা আরো জানান, যদি কারো সৃজনশীল কাজ নিবন্ধিত হয়, তবেই তিনি মামলা করতে পারবেন। শেখ আবদুল হাকিমের সৃজনশীল কাজের নিবন্ধন করা আছে কি না, তা তাঁর জানা নেই।
নিজের ফেসবুক পোস্টে শেখ আবদুল হাকিম জানিয়েছিলেন, ‘বনিবনা’ না হওয়ায় সেবা প্রকাশনী থেকে দুবার বেরিয়েও গিয়েছিলেন লেখক। একবার একাধিক ব্যক্তির উপস্থিতিতে কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে মধ্যস্থতাও হয় তাঁর। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণিও।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ওসমান গণি এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, ‘অনেক আগের কথা, মনে নেই। আমার বক্তব্য হলো, যদি কেউ টাকা পেয়ে থাকেন, তাঁকে তো দেওয়াই উচিত। কাজী সাহেব গরিব মানুষ নন। তিনি কাউকে টাকা দেবেন না বলে আমার মনে হয় না। তা ছাড়া, কাজী সাহেব ভালো মানুষও বটে।’
তবে এ ব্যাপারে সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।