ঝিলপাড়ে ঝুঁকিতে সহস্রাধিক মানুষ
দোতলা টিনশেড বাড়ি ঝিলের পানিতে দেবে ১২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও রাজধানীর রামপুরায় ঝিলপাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বাস করছে সহস্রাধিক মানুষ। ঝিল দখল করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘর তৈরি করে ভাড়া দিচ্ছে প্রভাবশালীরা। আর নিরুপায় হয়ে স্বল্প খরচের এসব ঝুলন্ত ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এদিকে, দুর্ঘটনার চারদিন পার হলেও দেবে যাওয়া ওই বাড়ির মালিক মনির হোসেনকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
১০ ফুট পানি আর ময়লা-আবর্জনায় ভরা কাদার স্তরের ওপরই বসবাসের জন্য নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ এই ঘর সামান্য কটি বাঁশ আর পাতলা রডের ওপরই তৈরি করা হয়েছিল, সেই সাথে মেঝেতে ছিল সিমেন্টের ঢালাই। এই কাঠামোর কারণেই এতগুলো মানুষকে ধারণ করতে অক্ষম ছিল বাড়িটি। তাই করুণভাবে প্রাণ দিতে হলো অন্তঃসত্ত্বাসহ ১২ জনকে।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় শেফালি বেগম মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে বেঁচে গেলেও, হারিয়েছেন প্রাণপ্রিয় সন্তানকে। ছেলের মৃত্যুশোককে সঙ্গী করেই ঝিলপাড় ছাড়তে চান তিনি।
শেফালি বলেন, ‘এখানে আর থাকব না। আর থাকার কোনো কায়দা আছে? আর থাকব না।’
এত বড় দুর্ঘটনার পরও বাধ্য হয়ে অনেকে এখানে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। তাদেরই একজন সিকিম আলী। তিনি গত বুধবারের দুর্ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী। বিকল্প কোনো উপায় না থাকায় এখানেই থাকতে চান তিনি।
সিকিম আলী বলেন, 'ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আমাদের কিছু করার নেই। অসহায় না হলে এসব জায়গায় ঝুঁকি নিয়ে কেউ থাকে না।'
এলাকার প্রভাবশালীরা জলাশয় ভরাট করে কিংবা তার ওপরই কোনো রকম ঘর তৈরি করে ভাড়া দেয় নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে। পুনরায় বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ এই ঝুলন্ত ঘরের মানুষগুলোকে অন্যত্র পুনর্বাসনের পরামর্শ দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক এ বি এম নরুল হক। তিনি বলেন, এটি আসলে ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আবার একটি ডিজ্যাস্টার (বিপর্যয়) হবে। সে ক্ষেত্রে তাদের এগুলো ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়া উচিত।
গত বৃহস্পতিবার রামপুরার ঝিলপাড়ে দোতলা টিনশেড বাড়িটি দেবে ১২ জন মারা যায়।