‘বাংলাদেশ হলে কষ্ট থাকবে না’
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ার ছড়া ছিটমহল। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি ভারতীয় ছিটমহল। এ ছিটমহলে জন্ম হয়েছে পঞ্চাশোর্ধ্ব আমেনা বেগমের। যখন বুঝতে শিখলেন, জানতে পারলেন ইচ্ছে করলেই এদিক-ওদিক যাওয়া যায় না। নানা নিষেধ আর আইনে বাঁধা তাদের জীবন। কিন্তু গতকাল বুধবার থেকেই তাঁর মনের ইচ্ছেগুলো আবার ডানা মেলতে শুরু করেছে। কারণ এদিনই বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তির কথা জানতে পেরেছেন আমেনা বেগম।
কেমন লাগছে খবরটা শুনে? আমেনা বেগম বললেন, ‘আমরা আর বন্দী নই। নিজেদের মুক্ত পাখির মতো মনে হচ্ছে।’ আমেনা আরো বললেন, ‘এখন এখানে স্কুল-কলেজ হলে আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারবে।’
ভারতের রাজ্যসভায় বহু প্রতীক্ষিত স্থলসীমান্ত চুক্তি পাস হওয়ায় আনন্দের জোয়ারে ভাসছে ছিটমহলবাসী। ছিটমহলগুলোতে চলছে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল। লোকসভায় বিলটি পাস হলেই বন্দিজীবনের অবসান ঘটবে দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহলের ৫১ হাজার ৫৮০ জন মানুষের।
ভারতীয় ছিটমহল দাসিয়ার ছড়াতেই জন্ম শামসুর নাহারের। নবম শ্রেণিতে পড়ছে সে। ছিটমহল বিনিময়ের সম্ভাবনার খবর শুনে শামসুর নাহার উচ্ছ্বসিত। সে বলে, ‘১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। অনেক সময় নাম-ঠিকানা গোপনও রেখে স্কুল-কলেজে পড়তে হয়। বাংলাদেশ হলে আমাদের আর কষ্ট করতে হবে না।’
একই উপজেলার কালিরহাট ছিটমহলের বাসিন্দা মোজাফফর হোসেন জানান, দীর্ঘ বঞ্চনার পর মৌলিক অধিকারসহ নাগরিকত্বের পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকার আশায় আমরা ছিটবাসী বেঁচে আছি। আমরা আশা করি, দ্রুত ছিটমহল বিনিময় করে আমাদের অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটানো হবে।’
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, ‘ভারতের মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর রাজ্যসভায় স্থলসীমান্ত বিলটি পাস হয়েছে। এতে করে আমাদের ছিটমহলবাসীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফল আমরা পেয়েছি। আশা করি, লোকসভায় বিলটি পাস হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করা হবে। ছিটমহলবাসীরা নাগরিকত্ব পেয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরতে-ফিরতে পারবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’