আঁধার ভেঙে ‘মুক্তির’ উৎসব
এপারে বাংলাদেশের লালমনিরহাট। ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার। মাঝখানে কাঁটাতার ভাগ করে রেখেছে দুটি জেলা, দুটি দেশকে। এই দুটি জেলার অভ্যন্তরেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি ছিটমহল। ওপারে বাংলাদেশের রয়েছে ৪৭টি আর এপারের জেলায় রয়েছে ভারতের ৫৯টি ছিটমহল।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি পাস হচ্ছে- এমন খবরে এপারের বিভিন্ন ছিটমহলে তিন ধরে চলছে উৎসবের আমেজ, মিষ্টি বিতরণ আর আনন্দ মিছিল। ওপারের চিত্রটি ছিল একটু ভিন্ন। চুক্তিটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর রাজ্যসভার অনুমোদনে ধীরে ধীরে আলোর ঝলকানি বাড়তে থাকে ঠিকই তবে তা উৎসবে পরিণত হয়নি বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত।urgentPhoto
তবে সন্ধ্যার কিছুটা আগে যখন খবর আসে লোকসভাতেও স্থলসীমান্ত চুক্তি বিলটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তখন বদলে যেতে থাকে ছিটমহলগুলোর চিত্র। সন্ধ্যা গড়িয়ে যেমন রাত নামে, তেমনি বিভিন্ন ছিটমহলের নানা বয়সী নারী-পুরুষ রাতের আঁধার ভেদ করে নেমে আসে রাস্তায়। চলে তাৎক্ষণিক বিজয় মিছিল, পোড়ানো হয় বাজি। এনটিভি অনলাইনের পক্ষে এপার থেকে সেখানকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
তবে অনুমোদন হওয়া বিলটিতে রাষ্ট্রপতির চূড়ান্ত স্বাক্ষরের পরেই বাংলাদেশি ছিটমহলবাসী মূল উৎসব করবেন বলে জানা গেছে।
কোচবিহারের দিনহাটা থেকে জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন ছিটমহলবাসী এনটিভি অনলাইনকে জানান, কোচবিহারের দিনহাটার অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশি ছিটমহল মশালডাঙ্গা, বাত্রিগাছ, পোয়াতের কুঠি, মধ্য মশালডাঙ্গা, ছিট করলাসহ বিভিন্ন ছিটমহল ও এর আশপাশের এলাকায় উল্লসিত বাংলাদেশি ছিটমহলের বাসিন্দারা তাৎক্ষণিকভাবে বিজয় মিছিল করেছেন। এ ছাড়া এসব এলাকায় বাজি পোড়ানো হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মধ্য মশালডাঙ্গার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, “আমার সিদ্ধান্ত ছিল অনুমোদন পাওয়া বিলটিতে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পরেই আমরা বিজয় মিছিলসহ উৎসব করব। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ‘নিজ দেশে পরবাসী’ থাকা মানুষ শেষ পর্যন্ত খবরটি পাওয়ার আর নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি, রাস্তায় নেমে পড়েন।”
সাদ্দাম হোসেন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশি ছিটমহলে থেকেও সেদেশ থেকে ছিটকে প্রায় অবরুদ্ধ জীবনযাপন করেছি। তবে এখন হয়তো আমরা আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা পেতে যাচ্ছি।’
জেসমিন খাতুন বলেন, ‘এবার হয়তো আমাদের বঞ্চিত জীবনের অবসান হতে চলেছে, তাই উভয় দেশের সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটি, ভারত ইউনিটের পক্ষ থেকে জানা গেছে, লোকসভায় অনুমোদন হওয়া বিলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন সই করবেন, ঠিক তখনই বাংলাদেশি ছিটমহলবাসী মূল উৎসব পালন করবে।
এ ছাড়া আগামী ২৬ জুন দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা মুক্ত দিবসের দিন তিনবিঘা করিডরে উভয় দেশের ছিটমহলবাসীর যৌথ সমাবেশসহ বিজয় উৎসব পালন করা হবে। আর এতে ছিটমহলবাসীর পক্ষ থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হবে।