নারী লাঞ্ছনা, ছাত্রলীগের পাঁচজন স্থায়ী বহিষ্কার
পয়লা বৈশাখের দিন আদিবাসী এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্তা, ছিনতাই ও মারধরের ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ছিলেন। এ ছাড়া গত ৬ মার্চ দোল উৎসবে একজন ছাত্রীর গায়ে রঙ দেওয়ার দায়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে তিন মাসের জন্য ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আজ শনিবার এক নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নিয়মিত সিন্ডিকেট সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাত সোয়া ৮টার দিকে রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক প্রশাসনিক ভবনের ফটকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সামনে এই বহিষ্কারের ঘোষণা দেন।
আজীবন বহিষ্কৃতরা হলেন, জাবি শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য ও ৪২তম ব্যাচের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত ইসলাম বিজয়, শহীদ সালাম বরকত হল শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ও ৪২তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিজ ইসলাম, ছাত্রলীগকর্মী ও নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ ৪৩তম ব্যাচের আব্দুর রহমান ইফতি, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান ও নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ ৪৩তম ব্যাচের নুরুল কবীর। এ ছাড়া তিন মাসের জন্য ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য হামজা রহমান অন্তরকে।
এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ঘোষণা শোনার সাথে সাথে উল্লাসে ফেটে পড়েন এর বিচার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের শিক্ষার্থীরা। এ প্রতিবেদন লেখার সময় ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করছিলেন শিক্ষার্থীরা।
এ শাস্তির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’-এর সংগঠক ও অর্থনীতি বিভাগের ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিয়া ফেরদৌসী চৈতী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা এ রায়কে সাধুবাদ জানাই। এখন সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন করে নিপীড়করা যেন আর ক্যাম্পাসে প্রবেশ না করতে পারে প্রশাসনের প্রতি সে দাবি জানাই। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যায় পাঁচ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর হাতে লাঞ্ছনার শিকার হন বলে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম ব্যাচের এক আদিবাসী ছাত্রী। অভিযুক্তরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে গত ১৭ এপ্রিল একক ক্ষমতাবলে আট শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। এ ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ নেতা-কর্মীকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রীকে লাঞ্ছনার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল গত ১১ মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে ২১ মে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটি পাঁচজনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তিন ছাত্রকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতি পাওয়া ছাত্রলীগকর্মীরা হলেন বিকাশ কুমার মোহন্ত (প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ৪৩তম ব্যাচ), আশরাফুল ইসলাম (ইতিহাস বিভাগ, ৪৩তম ব্যাচ) ও অর্নপ দত্ত (রসায়ন বিভাগ, ৪৩তম ব্যাচ)।
যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের প্রধান অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, ঘটনা তদন্তের জন্য তাঁরা ১৪টি সভা করেন। তাঁদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।