গণিতের কারণে বরিশালে পাসের হার কম
গণিত বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষার কারণে এ বছর বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ ৫-এর সংখ্যা দুটোই কমেছে। বোর্ডে এবার পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গতবারের চেয়ে যা ৬ দশমিক ২৯ ভাগ কম। গত বছর এ হার ছিল ৯০ দশমিক ৬৬ ভাগ।
এ বছর জিপিএ ৫ পেয়েছে তিন হাজার ১৭১ জন শিক্ষার্থী। গতবার এ সংখ্যা ছিল চার হাজার ৭৬২টি। অর্থাৎ এবার এক হাজার ৫৯১ জন কম জিপিএ ৫ পেয়েছে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, হরতাল-অবরোধ আর গণিত বিষয়ে এবার প্রথম সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ায় পাসের হার কমেছে। এ বছর সাফল্য বলতে এই বোর্ডের অধীনে এবার শূন্যভাগ পাস করা কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। আর পাসের হারে ২০ ভাগের নিচে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। তবে বরাবরের মতো এবারও ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা সব দিক থেকেই এগিয়ে রয়েছে।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ শাহ আলমগীর এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন। এ সময় প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দফায় দফায় শিডিউল পরিবর্তনের কারণে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে সময় লেগেছে ১৩ দিন বেশি। এতে পরীক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তা ছাড়া এবার গণিতে প্রথমবারের মতো সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ায় ফল কিছুটা খারাপ হয়েছে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, গতবারের চেয়ে গণিতে ৯ দশমিক ৬ ভাগ কমে এবারে পাসের হার হয়েছে ৮৮ দশমিক ৪৬ ভাগ।
এবারও মেয়েরা এগিয়ে
শিক্ষা বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার বরিশাল বোর্ডের অধীনে এক হাজার ৩৪২টি বিদ্যালয় থেকে ৭০ হাজার ৮১৭ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ছাত্র ৩৫ হাজার ২২৭ ও ছাত্রী ৩৫ হাজার ২২৯ জন। পাসের হারের বেলায় ৮৪ দশমিক ৮৪ ভাগ ছাত্রী এবং ৮৩ দশমিক ৯০ ভাগ ছাত্র পাস করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ৬২৫ ছাত্রী ও এক হাজার ৫৪৬ জন ছাত্র। গত বছর ৭০ হাজার ৪৩৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৭০ হাজার ৯২ জন, যার মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ৬৩ হাজার ৫৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩১ হাজার ৮৬১ জন এবং ছাত্রী ৩১ হাজার ৬৮২ জন। ছেলেদের পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ৯৭ এবং মেয়েদের পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ৩৪ ভাগ। জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে গত বছরও মেয়েরা ছিল এগিয়ে। গত বছর জিপিএ ৫ পাওয়াদের মধ্যে ছিল দুই হাজার ৩৩৮ জন ছাত্র এবং দুই হাজার ৪২৪ জন ছাত্রী।
অন্যদিকে অসদুপায় অবলম্বনের কারণে বহিষ্কারের দিক দিয়ে এবার ছেলেমেয়ে উভয়েই সমান স্থানে রয়েছে। মোট ২৪ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যার মধ্যে ১২ জন করে ছাত্রছাত্রী রয়েছে। গত বছর ৫৩ জন বহিষ্কার হলেও এর মধ্যে ৪৭ জনই ছিল ছাত্র। আর ছাত্রী ছিল মাত্র ছয়জন।
এবার বিজ্ঞান বিভাগে ১৭ হাজার ৩৬২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৬ হাজার ৩৭১ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক ৫৮ ভাগ। এ বিভাগে উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র নয় হাজার ২৪৮ জন এবং ছাত্রী সাত হাজার ১২৩ জন।
মানবিক বিভাগে ২৮ হাজার চারজন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২১ হাজার ৯২ জন। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৮৯ ভাগ। এর মধ্যে সাত হাজার ৫৭২ জন ছাত্র এবং ১৩ হাজার ৫২০ জন ছাত্রী। ৭২ দশমিক ৮১ শতাংশ ছাত্র ও ৭৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২৫ হাজার ৪৫১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২১ হাজার ৯৮৩ জন। পাসের হার ৮৬ দশমিক ৭১ ভাগ। এর মধ্যে ১২ হাজার ৭৩৭ জন ছাত্র ও নয় হাজার ২৪৬ জন ছাত্রী। সংখ্যায় মেয়েরা পিছিয়ে থাকলেও শতকরা হারে এ বিভাগেও এগিয়ে রয়েছে তারা। পাসের হারে ৪৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ ছেলে ও ৮৯ দশমিক ১৬ শতাংশ মেয়ে।
পাসে এগিয়ে ঝালকাঠি
বরিশাল বোর্ডে পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে ঝালকাঠি জেলা। এখানে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৯৩ ভাগ। ১৫৯টি বিদ্যালয়ের ছয় হাজার ৫৩৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ছয় হাজার ৫০৫ জন। পাস করেছে পাঁচ হাজার ৬৫৫ জন।
গতবার প্রথম স্থানে থাকা বরিশাল জেলা এবার দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে। পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৭ ভাগ। ৩৯২টি বিদ্যালয়ের ২৪ হাজার ৮৮৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ২৪ হাজার ৭৭৯ জন। পাস করেছে ২১ হাজার ৩০২ জন। তৃতীয় স্থানে থাকা ভোলা জেলায় পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ ভাগ। ১৬৪টি বিদ্যালয়ের নয় হাজার ৬১৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় নয় হাজার ৫৫৪ জন। পাস করেছে আট হাজার ১৫৮ জন।
এরপর যথাক্রমে পিরোজপুরে ২৩৭টি বিদ্যালয়ের নয় হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে নয় হাজার ৬৪৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে আট হাজার ১৬০ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৬০ ভাগ। বরগুনায় ১৪৩টি বিদ্যালয়ের সাত হাজার ৪৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে সাত হাজার ৩৮৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ছয় হাজার ২১৩ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ১৩ ভাগ। পটুয়াখালীর ২৪৭টি বিদ্যালয়ের ১২ হাজার ৬৪২ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১২ হাজার ৫৮৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে নয় হাজার ৯৫৮ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ১১ ভাগ।
রোববার থেকে উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণ
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ৬০ জন পরীক্ষার্থীর ফলাফল স্থগিত রয়েছে। কারো ফলাফল নিয়ে সন্দেহ থাকলে রোববার থেকে উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করা যাবে। এক সপ্তাহ পর্যন্ত এই আবেদন গ্রহণ করা হবে।
গ্রাম অঞ্চলের বেশির ভাগ বিদ্যালয় উঠে এসেছে সেরা ২০-এর তালিকায়।
সেরা ২০-এ গ্রামের বিদ্যালয়
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে বরাবরের মতো এবারও সেরা ফলাফল অর্জন করেছে বরিশাল ক্যাডেট কলেজ। মোট ৫৫ জন শিক্ষার্থীর সবাই জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়। ২৯৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২৮৫ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২০৫ জন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে বরিশাল সরকারি জিলা স্কুল। এখানে ২৬৮ জন শিক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৭৪ জন।
এ বছর নগরীর তুলনায় গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ বিদ্যালয় উঠে এসেছে সেরা ২০-এর তালিকায়। জেলা সদরের সরকারি বিদ্যালয়গুলো ছাড়া নগর ও শহরের কোনো বিদ্যালয়ই ঠাঁই পায়নি এই তালিকায়।
সেরা ২০টি কলেজের মধ্যে আরো যেগুলো স্থান পেয়েছে সেগুলো হলো যথাক্রমে বরগুনার পাথরঘাটার তসলিমা মেমোরিয়াল একাডেমি। ৫৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৫৬ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৯ জন।
বোর্ডে পঞ্চম পটুয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ২৬১ জনের মধ্যে পাস করেছে ২৫২ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৯ জন। ষষ্ঠ বরগুনার তালতলী উপজেলার বগিরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪২ জন শিক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে, জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৫ জন। সপ্তম পটুয়াখালীর সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৪২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২৩৫ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৮ জন। অষ্টম পিরোজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ১৪৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৩৪ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৮ জন। নবম বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোট বগি পি. কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৫৮ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২০ জন।
বরিশাল সদর উপজেলার বুখাইনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় বোর্ডে দশম হয়েছে। ৫৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে সবাই। জিপিএ ৫ পাস করেছে ১৭ জন। ১১তম পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় কে এম লতিফ ইনস্টিটিউশনে ২০৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৯৬ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫০ জন। ১২তম ভোলা সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ১৪৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৪২ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৬ জন।
এরপর পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কালাদোনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৫৫ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৫ জন। বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজিরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৯৫ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৯ জন।
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ওয়াজেদ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ১৬তম হয়েছে। ১২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১১৯ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৬ জন।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১১৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১১৭ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২০ জন। পিরোজপুর সরকারি বিদ্যালয়ে ১৬৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৫১ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪০ জন এবং বরগুনার আমতলী উপজেলার চড়কগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৭৯ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে ২১ জন।