বাজেট
স্কুলেই খাবার পাবে ৩৪ লাখ শিশু
স্কুলে শতভাগ ভর্তির সফলতা ধরে রাখতে সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩৪ লাখ শিশুর জন্য স্কুলেই খাবারের (স্কুল ফিডিং) কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এ জন্য একটি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাজেট উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী। এ সময় তিনি আরো জানান, সরকার ২০১৮ সাল নাগাদ প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে মোট ৩১ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়েই শিক্ষার মূল ভিত রচিত হয়। তাই আমরা মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছি এবং ২০১৮ সাল নাগাদ প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়েছি। শতভাগ ভর্তির সুফল ধরে রাখতে ৯৩টি উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩৩ লাখ ৯০ হাজার শিশুর জন্য স্কুল ফিডিং কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। উদ্যোগ নিয়েছি স্কুল ফিডিং নীতিমালা প্রণয়নের।’
‘বিদ্যালয় নেই এমন গ্রামে এক হাজার ৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের পরিকল্পনার অধীনে এক হাজার ১৯টির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং অবশিষ্টগুলো নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে ১০টি উন্নয়ন সহযোগী দেশ/সংস্থার সহায়তায় তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৩) বাস্তবায়ন করছি যার আওতায় আসবাব ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রম চলমান আছে। মাঠ প্রশাসনের প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর করার কাজও চলছে। এ ছাড়া ১১টি উপজাতীয় ভাষায় পাঠ্যক্রম প্রণয়নের ফলে উপজাতি শিশুরা মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।
মানসম্পন্ন শিক্ষার সম্প্রসারণের কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রসারে আমাদের উদ্ভাবিত সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের ব্যবহার, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ, উপবৃত্তি প্রদানের মতো কৌশলসমূহ বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে, যা আমরা অব্যাহত রাখব। একই সঙ্গে চলমান থাকবে ইংরেজি ও গণিত শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ডের এক হাজার কোটি টাকা সিড মানির বিপরীতে অর্জিত ৭৫ কোটি টাকা মুনাফা থেকে স্নাতক ও সমপর্যায়ের মেয়েদের উপবৃত্তি প্রদান কার্যক্রমও চলমান থাকবে।’
জনমিতিক লভ্যাংশের সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের উদ্যোগের উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ৯২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০টি উপজেলায় একটি করে কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে গার্লস টেকনিক্যাল স্কুল, ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, চারটি বিভাগীয় শহরে চারটি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং সকল বিভাগে একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, ১৫-৪৫ বছর বয়সী নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে মৌলিক সাক্ষরতা ও জীবনদক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
বলা হয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং উচ্চ শিক্ষার প্রসারের কথাও। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে শুরু হওয়া কার্যক্রমসমূহের পাশাপাশি আমরা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট নির্মাণ করছি। এগিয়ে চলেছে ১২৮টি উপজেলায় রিসোর্স সেন্টার স্থাপনের কাজ। চলমান আছে বরিশালে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের কাজ। উদ্যোগ নিয়েছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে আমরা ‘Accereditation Council’ গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছি।’