‘আমরা সংক্ষুব্ধ, পূর্ণ রায় পেলে রিভিউ’
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন।
আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মুজাহিদের ছোট ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে আমরা ন্যায়বিচার না পেয়ে আপিল বিভাগে এসেছিলাম। কিন্তু এখানেও আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে, সে অভিযোগের বিষয়ে মাবরুর বলেন, ‘এ অভিযোগের সাক্ষীরা তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণকালে কোথাও বলেননি যে মুজাহিদ বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। অভিযোগ গঠনে কোন দিন, কোন তারিখে বা কখন মুজাহিদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছেন, এমন কিছুই বলা হয়নি বা উল্লেখ করা হয়নি।’
‘এমনকি ট্রাইব্যুনাল বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের জন্য অভিযোগ গঠনের যে আদেশ দিয়েছিলেন, সেখানেও উল্লেখ নেই যে আলী আহসান মুজাহিদ কাকে কাকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছেন,’ যোগ করেন মাবরুর।
এ ছাড়া বুদ্ধিজীবীদের সন্তানরা ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণকালেও মুজাহিদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, এমন কোনো বক্তব্য দেননি বলে দাবি করেন মুজাহিদের ছোট ছেলে। তিনি বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর আমরা রিভিউ আবেদন করব।’
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মুজাহিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘এ রায়ে ৬ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। আমরা এ রায়ে সংক্ষুব্ধ। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর আমরা রিভিউ আবেদন করব।’
মুজাহিদের আপিল শুনানিতে গত ২৯ এপ্রিল থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে ট্রাইব্যুনালের রায় ও মামলা-সংক্রান্ত নথিপত্র (পেপারবুক) পাঠ শেষ করে আসামিপক্ষ। এর পর গত ২৫, ২৬ ও ২৭ মে মোট তিন কার্যদিবস আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষে মামলায় যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়।
আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান এবং অ্যাডভোকেট শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া ২৫ পৃষ্ঠার লিখিত যুক্তিও আদালতে দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
গত ২৭ মে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শেষ হয়। ওই দিন রায়ের জন্য ১৬ জুন চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে বলে দিন ধার্য করা হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ। এ ঘটনায় ২০১১ সালের ২১ জুলাই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন কর্মকর্তারা।
এর পর ২ আগস্ট তাঁকে অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ২০১২ সালের ২১ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সাতটি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ।