অভিষেকেই উজ্জ্বল মুস্তাফিজ
পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে নজর কেড়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। সেই ম্যাচে চার ওভার বল করে ২০ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকেও দারুণ উজ্জ্বল এই তরুণ বাঁ-হাতি পেসার। ৯.২ ওভার বল করে ৫০ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাতক্ষীরার এই ক্রিকেটার।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে অভিষেকে ৫ উইকেট নিলেন তিনি। এর আগে তাসকিন আহমেদ ভারতের বিপক্ষেই অভিষেকে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। গত বছরের জুনের সেই ম্যাচে বাংলাদেশ অবশ্য হেরেছিল। তবে বৃহস্পতিবার মুস্তাফিজের ঔজ্জ্বল্যে বাংলাদেশ জিতেছে বড় ব্যবধানে, ৭৯ রানে।
অথচ প্রথম স্পেলে ভালো বল করেও কোনো উইকেট পাননি মুস্তাফিজ। ৪ ওভার বল করে ২৭ রান দিয়েছিলেন প্রথম স্পেলে। কিন্তু দ্বিতীয় স্পেলে ‘বিধ্বংসী’ রূপে দেখা যায় ১৯ বছরের এই তরুণকে। ২.২ ওভার বল করে ১০ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন।
ব্যক্তিগত সপ্তম ওভারে ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির ধাক্কায় আঘাত পেয়ে কিছুক্ষণের জন্য মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। শুশ্রূষার পর আবার মাঠে ফেরেন তিনি। ফিরেই আবারো তাঁর দুর্দান্ত বোলিং। সেই স্পেলে তিন ওভার বল করে ১৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি।
ধোনির সঙ্গে ধাক্কা লাগার জন্য নিজেকেই দায়ী করছেন মুস্তাফিজ। খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আসলে সেটা আমারই ভুল ছিল। কারণ, আমি ব্যাটসম্যানের লাইনে চলে আসছিলাম বলে ধোনির কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। পরে আমরা দুজনেই কথা বলে সবকিছু মিটমাট করে নিয়েছি।’
মুস্তাফিজ প্রথম উইকেটটি নিয়েছেন নিজের পঞ্চম ওভারে রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে। পরের ওভারে অজিঙ্কা রাহানেকেও সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি।
টানা দুই বলে সুরেশ রায়না ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়ে ছিলেন। অভিষেকে হ্যাটট্রিক করে ইতিহাস গড়তে না পারলেও ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের সম্মান উঠেছে তাঁর হাতেই।
তাঁর এই সাফল্যের রহস্য কী? সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নে মুস্তাফিজের সপ্রতিভ জবাব, ‘আসলে এই ম্যাচকে ঘিরে আলাদা কোনো পরিকল্পনা ছিল না আমার। আর দশটা ম্যাচের মতোই খেলতে নেমেছি। চেষ্টা ছিল, দলকে জেতানোর জন্য নিজের সেরাটা দেওয়ার। তা পেরেছি বলে খুব ভালো লাগছে।’
পাঁচ উইকেট নিতে গিয়ে বেশ কয়েকটি ‘অফ কাটার’ করেছেন মুস্তাফিজ। সংবাদ সম্মেলনে এই বল করা শেখার গল্পটাও বললেন তিনি, ‘এনামুল হক বিজয়ের কাছ থেকে অফ কাটার কীভাবে করতে হয়, তা শিখেছি। পরে সেই বলে তাকে আউটও করেছি। এই বল করেই আজ সাফল্য পেয়েছি।’
উজ্জ্বল অভিষেকের দিন মুস্তাফিজের সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে তাঁর ভাই মোখলেসুর রহমানের কথা, ‘আমি সাতক্ষীরা শহর ভালোভাবে চিনতাম না। আমার এই ভাই প্রতিদিন মোটরসাইকেলে করে আমাকে সাতক্ষীরায় অনুশীলনের জন্য নিয়ে আসত। আজ সাফল্যের দিন তাঁকেই সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে।’