ভক্তদের ক্ষোভ, ক্ষমা প্রার্থনা, বিচার দাবি
কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে অতিষ্ঠ হয়ে বোনের সঙ্গে তোলা ছবি ফেসবুক থেকে প্রত্যাহারের পর বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাসির হোসেনের পাশে দাঁড়িয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁর ভক্তরা। অনেকে কটূক্তিকারীদের ‘মানসিকভাবে বিকৃত ও অসুস্থ’ সম্বোধন করে তাদের বিচার দাবি করেছেন। সেই কটূক্তিগুলোর জন্য ‘প্রিয় নাসিরের’ কাছে ক্রিকেটপ্রেমীদের হয়ে ক্ষমাও চেয়েছেন কেউ কেউ।
ভারত সিরিজে সাফল্যের পর দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে চারদিন ছুটি পেয়ে বৃহস্পতিবার ছোট বোনকে সঙ্গে বিমানে করে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য সেখান থেকে রংপুরে নিজ বাড়িতে যাবেন। ছোট বোনের আবদার মেটাতে বিমানে ‘সেলফি’ তুলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন নাসির।
অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, এই ছবিতে অনেকেই অশালীন ও কটু মন্তব্য করেন। কেউ কেউ ফান পোস্টও করেছেন। এমন বিরূপ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হয়ে সেই পোস্টটি ডিলিট করে দেন নাসির।
ফ্যানদের অশালীন মন্তব্যে এতটাই মর্মাহত হন নাসির, শনিবার এ ব্যাপারে একটি স্ট্যাটাসও দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আপনাদের খারাপ মন্তব্য দেখে অনেক কষ্ট পেলাম। আমার ছোট বোনের আবদার মেটাতে তার সাথে আমার ছবি পোস্ট করেছিলাম। তাই বলে আপনারা অনেকেই বাজে মন্তব্য করেছেন। যেটা নিয়ে অনেকেই ফান পোস্টও করছেন। পোস্টটা ডিলিট করে দিলাম, এখন খুশি তো? আপনাদের মতো ফ্যান আমার দরকার নেই। আমাকে যাঁরা পছন্দ করেন না, তাঁরা আমার ছবিতে লাইক দেবেন না। আমাকে ফলোও করবেন না।’
এই স্ট্যাটাস দেওয়ার পরপরই কমেন্টে নাসিরের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় তাঁর ভক্তদের। আজ শনিবার সন্ধ্যায় এই স্ট্যাটাস দেওয়ার পর রাত ১০টা পর্যন্ত তাতে লাইক পড়েছে এক লাখেরও বেশি এবং স্ট্যাটাসটি সাড়ে তিন হাজারের বেশিবার শেয়ার করা হয়। আর এতে মন্তব্য এসেছে সাড়ে ১০ হাজারের বেশি।
ওই স্ট্যাটাসের নিচে করা মন্তব্যে শুভ বণিক লিখেছেন, ‘জানি না ভাইয়া তবে অতি দুঃখিত নিজেকে মনে হচ্ছে। আমরা আপনার ডাই হার্ড ফ্যান আর আপনার বোনকে নিয়ে যারা কটূক্তি অথবা বাজে কথা বলেছেন, তাঁদের হীন মনমানসিকতার জন্য আপনি যা বলছেন তা অতি উত্তম। অবশ্যই আপনি একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, তাই বলে আপনার নিজস্বতা বলে কি কিছু থাকতে পারে না। অবশ্যই আপনার বিষয়ে সবার কথা বলার অধিকার আছে কিন্তু আপনার পরিবারের বিষয়ে নয়। তবে ধন্যবাদ এদের মুখে কঠোর জবাব দেওয়ার জন্য।’
মুনতাসির সিয়াম লিখেছেন, ‘ভাই রাগ করে কই যাবেন! এরা তো মার্ক জুকারবার্গরেও ছাড়ে নাই তাঁর বউয়ের সাথে দেওয়া ছবিতে।’
পঙ্কজ দত্ত লিখেছেন, ‘আপনার সাহসী প্রতিবাদী মন্তব্য দেখে খুব ভাল্লাগছে। আমাদের দেশের যুব সমাজ কুরুচিসম্পন্ন মন্তব্য করতে বেশি পছন্দ করে, এগুলো তাদের পরিবার থেকেই শেখা। এরা ভাইবোনের সম্পর্ক নিয়েও খারাপ মন্তব্য করতে দ্বিধাবোধ করে না। তবে পোস্ট মুছে দেওয়া ঠিক হয় নাই। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করা ঠিক না।’
মডেল, অভিনেত্রী হোমায়রা হিমু লিখেন, ‘কিছু কিছু বাংলাদেশিরা কাকে কী বলতে হয়, কখন কী বলতে হয়, কী নিয়ে ফান করা যায়, কী নিয়ে ফান করা যায় না-এসব বোঝে না, এদের মাথায় প্রব্লেম আছে, এদের অভ্যাসই ভাজে মন্তব্য করা। এরা হচ্ছে কীট, এদের কথায় কিছু মনে করবেন না দয়া করে।’
অনেকে আবার এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারও দাবি করেছেন, ওয়াহিদুজ্জামান হৃদয় লিখেছেন, ‘লজ্জিত ভাই। এর থেকে বেশি বলার কিছু নাই। এই বাংলাদেশ কিছু অসভ্য বর্বর কুলাঙ্গার জন্ম দিয়েছে, যারা ভাইবোনের মতো একটা পবিত্র সম্পর্ককেও খুব বাজেভাবে বিশ্লেষণ করে। এই মানসিকভাবে অসুস্থ কুলাঙ্গারদের বিচার হওয়া দরকার।’
আরফান চৌধুরী নামে একজন একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন নাসিরের ওয়ালে। তিনি বলেছেন, ‘নাসির ভাই, সবার তরফ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। মাফ করে দেবেন।’
নাহিদ ধ্রুব লিখেছেন, ‘কিছুদিন আগের কথা, সময়টা খারাপ যাচ্ছিল তামিমের। মানুষ তাঁর স্ত্রীকে অলক্ষুণে বলে গালমন্দ থেকে শুরু করে ডিভোর্স পর্যন্ত দিয়ে দিতে বলেছিল। এই মানুষগুলো কারা? আমরা...।
‘বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসান। মাথায় নিয়ে নাচি আমরাই আবার কিছুদিন আগেও সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে, তাঁর চরিত্র নিয়ে, তাঁর টাকা-পয়সার প্রতি লোভ নিয়ে জঘন্য কথাবার্তা বলেছিল কারা? আমরা...।
‘মুশফিক বিয়ে করেছে। ফেসবুকে স্বাভাবিকভাবেই এসেছে তাঁর যুগল ছবি। সেখানে কী মোটা এক মেয়েকে বিয়ে করেছে, দেখলে মনে হয় বয়সে বড়। মুশফিকের বউয়ের চেয়ে অমুকের বউ সুন্দর। এই কমেন্ট করেছিল কারা? আমরা...।
‘ক্যাপ্টেন মাশরাফিকে অনেকেই ল্যাংড়া, অচল মাল বলে সম্বোধন করেছিল।
‘সেদিনও দেখেছি। আজ মোস্তাফিজকে নিয়ে নাচানাচি করছি। আমি হলফ করে বলতে পারি কাল মোস্তাফিজ একটু খারাপ খেলুক, এই আমরাই তাকে গালমন্দ করতে পিছপা হব না।
আর নাসিরের এবারের ব্যাপারটা। ছোট বোনের অনুরোধে তাঁর সাথে ছবি দিয়েছিল নাসির। সেখানে আমরা কী করলাম!
আমাদের বাঙালি হয়ে জন্ম নেওয়ায় গর্বিত হওয়ার অনেক কিছুই আছে। তবে আজ একজন বাঙালি হিসেবে আমি আবারও লজ্জিত।’