রানা প্লাজা ধস : ইমারত আইনের মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ
ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ইমারত আইনের মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দাখিল করা অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। আজ বুধবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শাহিনুর রহমান এ অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
এ ছাড়া একই ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতা শুনানির জন্য আগামী ১৮ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত। সেই সঙ্গে এ মামলায় পলাতক ছয় আসামিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশও দিয়েছেন।
গত ১ জুন ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনে আলাদা দুটি মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
দুই মামলায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, তাঁর বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কুলু খালেক, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, পৌরসভার সাবেক মেয়র রেফাত উল্লাহ, বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী খানসহ ৫৯ জনকে আসামি করা হয়। তবে একই আসামি দুই মামলায় থাকায় মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪২ জনে।
এর মধ্যে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে ৪১ জনকে আর সাক্ষী করা হয়েছে ৫৯৪ জনকে। ইমারত নির্মাণ আইনে করা মামলায় ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং সাক্ষী করা হয়েছে ১৩০ জনকে।
অভিযোগপত্রের আসামিরা হলেন ভবন মালিক সোহেল রানা, তাঁর বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কুলু খালেক ও মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার মেয়র রেফাত উল্লাহ, কাউন্সিলর মোহাম্মাদ আলী খান, প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, নিউওয়েব বাটন লিমিটেডের চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান, নিউওয়েব স্টাইপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুর রহমান তাপস, ইথার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ওরফে আনিসুজ্জামান, আমিনুল ইসলাম, সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. সারোয়ার কামাল, আবু বক্কর সিদ্দিক, মো. মধু, অনিল দাস, মো. শাহ আলম ওরফে মিঠু, মো. আবুল হাসান, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সাবেক উপপ্রধান পরিদর্শক মো. আব্দুস সামাদ, উপপ্রধান পরিদর্শক মো. জামশেদুর রহমান, উপপ্রধান পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, পরিদর্শক প্রকৌশলী মো. ইউসুফ আলী, মো. শহিদুল ইসলাম, ইমারত পরিদর্শক মো. আওলাদ হোসেন, ইথার টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস, মো. শফিকুল ইসলাম ভূইয়া, মনোয়ার হোসেন বিপ্লব, মো. আতাউর রহমান, মো. আব্দুস সালাম, বিদ্যুৎ মিয়া, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম জনি, রেজাউল ইসলাম, নান্টু কন্ট্রাকটর, মো. আব্দুল হামিদ, আব্দুল মজিদ, মো. আমিনুল ইসলাম, নয়ন মিয়া, মো. ইউসুফ আলী, তসলিম ও মাহবুবুল আলম।
আসামিদের মধ্যে মাহবুবুল আলমকে শুধু ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় আসামি করা হয়েছে। দণ্ডবিধিতে দায়ের করা হত্যা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়নি।
আসামিদের মধ্যে মোট ২৬ জন পলাতক আছেন। অন্যদিকে আসামিদের মধ্যে রানাসহ চারজন ছাড়া সবাই জামিন নিয়ে কারাগারের বাইরে রয়েছেন।
এ দিকে আগের তারিখে শুনানির সময় মূল আসামি রানাকে আদালতে হাজির না করায় আদালতের কৈফিয়তের জবাব দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। আদালত কারা কর্তৃপক্ষের কৈফিয়ত গ্রহণ করেছেন।
এই মামলায় গত ২৮ জুনের শুনানিতে রানা প্লাজার মালিক মাসুদ রানাকে আদালতের হাজির করতে ব্যর্থ হয় কারা কর্তৃপক্ষ। ফলে তাদের কাছে কৈফিয়ত তলব করেন আদালত।
কারা কর্তৃপক্ষ আজ জানায়, ওই দিন ভুলবশত রানাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। হাজতি আসামির কাগজপত্র আদালতে উপস্থিত করা হলেও পুলিশ ভুলবশত তাঁকে নিয়ে আসেনি। বিষয়টিকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখতে আদালতের প্রতি অনুরোধ জানায় তারা।
সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) আনোয়ারুল কবীর বাবুল বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টায় ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা। এ সময় ভবনের নিচে চাপা পড়েন সাড়ে ৫ হাজার পোশাক শ্রমিক। এ ঘটনায় এক হাজার ১৩৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত ও পঙ্গু হয় প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।