ফেদেরারের অনন্য কীর্তির সামনে জোকোভিচের বাধা
আগামী মাসে ৩৪ বছর পূর্ণ হবে রজার ফেদেরারের। একজন পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়ের জন্য বয়সটা একটু বেশিই। তবে এই বয়সেও ফেদেরার দুরন্ত, দুর্নিবার। অ্যান্ডি মারেকে সরাসরি সেটে হারিয়ে উইম্বলডনের ফাইনালে ওঠা সুইস তারকার সামনে দারুণ দুটো অর্জনের হাতছানি। ফাইনালে নোভাক জোকোভিচকে হারাতে পারলে উইম্বলডনে রেকর্ড অষ্টম শিরোপার আনন্দে মেতে উঠবেন ফেদেরার। তিনি হবেন উন্মুক্ত যুগে উইম্বলডনের পুরুষ এককের সবচেয়ে বেশি বয়সী চ্যাম্পিয়ন।
শুক্রবারের সেমিফাইনাল যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল সোনালি সময়ের, ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সাত বছরে ১৬টি গ্র্যান্ড স্লাম জয় করা ফেদেরারকে। ৭-৫, ৭-৫, ৬-৪ গেমে জেতাই শুধু নয়, ২০টি এইস আর ৫৬টি উইনারের পরিসংখ্যানে যেন ‘ফেডএক্স’-এর প্রতিপত্তি প্রতিফলিত। আর তাই রেকর্ড অষ্টাদশ গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের দ্বারপ্রান্তে টেনিসের সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়।
এটা ফেদেরারের দশম উইম্বলডন এবং ২৬তম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল। জিতলেই অস্ট্রেলিয়ার কেন রোজওয়ালের পর বয়োজ্যেষ্ঠ উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হবেন তিনি। রোববার গতবারের ফাইনালেরই ‘রি-ম্যাচ’ হতে যাচ্ছে। গত বছর ফেদেরারকে পাঁচ সেটের ম্যারাথন লড়াইয়ে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো উইম্বলডন জয়ের আনন্দে মেতে উঠেছিলেন জোকোভিচ।
এ বছর দারুণ ছন্দে আছেন জোকোভিচ। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ছাড়াও ইন্ডিয়ান ওয়েলস, মায়ামি, মন্টে কার্লো আর রোম মাস্টার্সের চারটি গুরুত্বপূর্ণ শিরোপা জিতেছেন সার্বিয়ান তারকা। বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় এ বছর ৫০টি ম্যাচ খেলে মাত্র তিনটিতে হার মেনেছেন।
আবার উইম্বলডনের ফাইনালে জোকোভিচের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ফেদেরার রোমাঞ্চিত, ‘বর্তমান সময়ে যেকোনো জায়গাতেই হোক না কেন, নোভাকের বিপক্ষে খেলা দারুণ ব্যাপার। সে একজন অসাধারণ খেলোয়াড়। ক্যারিয়ারজুড়ে তার অবিশ্বাস্য সাফল্য। বিশেষ করে কয়েক বছর ধরে হার্ড কোর্টে তার অবিশ্বাস্য প্রাধান্য। অবশ্য ঘাসের কোর্টেও সে অনেক উন্নতি করেছে। তাকে হারানো খুব কঠিন।’
রোববার হতে যাচ্ছে ফেদেরার-জোকোভিচের ৪০তম লড়াই। মুখোমুখি লড়াইয়ে ফেদেরার সামান্য এগিয়ে। জোকোভিচের ১৯টির বিপরীতে তাঁর জয় ২০টি। গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালের লড়াইয়ে অবশ্য আপাতত ১-১ সমতা। এক বছর আগে উইম্বলডনে জোকোভিচ জিতলেও ২০০৭ সালের ইউএস ওপেনে সার্বিয়ান তারকাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন ফেদেরার। তবে এ বছরের লড়াইয়ে জোকোভিচ ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে। ইন্ডিয়ান ওয়েলস আর রোমের ফাইনালে জোকোভিচ জিতেছেন, আর দুবাইয়ের ফাইনালে জয় পেয়েছেন ফেদেরার।
বছরটা দারুণ কাটাচ্ছেন ঠিকই, তবে এবারের উইম্বলডনে সেই অদম্য জোকোভিচকে যেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চতুর্থ রাউন্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার কেভিন অ্যান্ডারসনকে হারিয়েছেন পাঁচ সেট লড়াই করে। শুক্রবার সেমিফাইনালে ফ্রান্সের রিশা গ্যাসকের বিপক্ষেও জয় পেয়েছেন বেশ ঘাম ঝরিয়ে, ৭-৬ (৭/২), ৬-৪, ৬-৪ গেমে।
রোববারের ফাইনালে জোকোভিচ জয় পেলে ৩০ বছর আগের একটি ঘটনার যেন মেলবন্ধন হবে উইম্বলডনে। ১৯৮৫ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন জোকোভিচের বর্তমান কোচ বরিস বেকার। কোচের সঙ্গে নিজের বেশ কিছু মিল খুঁজে পেয়ে ২৮ বছর বয়সী জোকোভিচ আনন্দিত, ‘খেলোয়াড়ি-জীবনে বরিস আমার মতোই আবেগপ্রবণ ছিলেন। সে সময় গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে তিনি আমার মতো ভালোভাবে ঘুমাতে পারতেন না।’
গত বছরের উইম্বলডন জয়কে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া সাফল্য হিসেবে রায় দিয়ে টেনিস সার্কিটে ‘দ্য জোকার’ নামে পরিচিত জোকোভিচের আশাবাদ, ‘সেই ম্যাচে ঘাসের কোর্টে রজারের বিপক্ষে জয় নিঃসন্দেহে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছিল আমাকে। এর কয়েক দিন পর আমি বিয়ে করেছি, তারপর বাবাও হয়েছি। আনন্দ-উচ্ছ্বাস-ভালোবাসার এক নতুন জগতে প্রবেশ করেছি। আশা করি রোববার আমি ভালো করতে পারব।’