বোলারদের কৃতিত্বে উদ্ভাসিত বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম টেস্ট শুরু হওয়ার আগের দিন। সংবাদ সম্মেলনে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মন্তব্য, ‘আমাদের প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য আছে।’ কোচের কথা যে স্রেফ ফাঁকা বুলি নয়, তা বোধহয় প্রথম টেস্টেই প্রমাণ করে ছাড়বেন বাংলাদেশের বোলাররা। মুস্তাফিজুর রহমানের তোপ আর জুবায়ের হোসেনের ঘূর্ণিতে পর্যুদস্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস ২৪৮ রানেই শেষ।
urgentPhoto
ওয়ানডে সিরিজে সাফল্যের পর টেস্ট সিরিজের প্রথম দিনটা তাই শুধুই বাংলাদেশের। ২১২ রানে শেষ ৯ উইকেট হারিয়ে আড়াই শ রানও করতে না পারা টেস্ট র্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের শুরুতেই চাপে। প্রথম দিন মাত্র দুই ওভার ব্যাট করার সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হতে দেননি তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। বিনা উইকেটে ৭ রানের স্বস্তি নিয়ে ফেরার সময় ইমরুল ৫ আর তামিম অপরাজিত ছিলেন ১ রানে।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মাহমুদউল্লাহর সৌজন্যে দিনের চতুর্দশ ওভারের সাফল্য উজ্জীবিত করে তুলেছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু তারপর থেকে উইকেটের জন্য মাথা খুঁড়ে মরতে হচ্ছিল স্বাগতিক দলকে। শেষ পর্যন্ত ডিন এলগারকে ফিরিয়ে স্বস্তি এনে দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। পরের ওভারেই সাকিব আল হাসানের বলে ফাফ ডু প্লেসি আউট।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। উদ্বোধনী জুটিতে অতিথিদের ৫৮ রান উপহার দেন স্টিয়ান ভ্যান জিল ও ডিন এলগার। ৩৪ রান করা ভ্যান জিলকে লিটন দাসের গ্লাভসবন্দি করে দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেওয়ার কৃতিত্ব মাহমুদউল্লাহর।
চতুর্দশ ওভারে ভ্যান জিল ফিরে যাওয়ার পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এলগার ও ডু প্লেসি। তবে দুজনকেই ফিরতে হয়েছে অর্ধশতকের হাতছোঁয়া দূরত্ব থেকে। দ্বিতীয় উইকেটে ৭৮ রান ওঠার পর এলগারকে (৪৭) লিটনের দ্বিতীয় ক্যাচে পরিণত করেন তাইজুল। পরের ওভারেই ডু প্লেসিকে (৪৮) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সাকিব। ১ উইকেটে ১৩৬ থেকে তাই ৩ উইকেটে ১৩৬ রানে পরিণত হয় প্রোটিয়ারা।
বাংলাদেশের মাটিতে হাশিম আমলার তেমন সাফল্য নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট অধিনায়ককে আরো একবার হতাশ করে প্রথম টেস্ট উইকেটের আনন্দে মেতে ওঠেন মুস্তাফিজুর রহমান। এই বাঁ-হাতি পেসারের চতুর্দশ ওভারের প্রথম বলে কট বিহাইন্ড হয়ে গেছেন আমলা (১৩)। পরের বলে জেপি ডুমিনিও এলবিডব্লিউ। তবে ওভারের তৃতীয় বলটি কুইন্টন ডি কক ঠেকিয়ে দেওয়ায় টেস্ট অভিষেকে হ্যাটট্রিকের অনন্য কীর্তি গড়তে পারেননি মুস্তাফিজ। অবশ্য পরের বলেই দুর্দান্ত ইনসুইঙ্গারে ডি কক বোল্ড!
১৭৩ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর প্রায় একাই লড়াই করেছেন মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা টেম্বা বাভুমা। টেস্টে প্রথম অর্ধশতক করে তিনি থেমেছেন ৫৪ রানে। অবশ্য ব্যক্তিগত ৫১ রানে মোহাম্মদ শহীদের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেছেন ইমরুল কায়েসের ব্যর্থতায়।
তার আগে ব্যক্তিগত ১৮ রানে শহীদের বলে স্লিপে ক্যাচ দিলেও সেই ইমরুলের ব্যর্থতায় ‘জীবন’ ফিরে পেয়েছিলেন ভার্নন ফিল্যান্ডার। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। জুবায়েরের করা পরের ওভারে সেই স্লিপেই ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। এবার আর ভুল করেননি সাকিব আল হাসান। ২৪ রান করে ফিল্যান্ডার বিদায় নিয়েছেন।
পরের ব্যাটসম্যান সাইমন হার্মার (৯) আউট হয়েছেন কিছুটা অদ্ভুতভাবে। জুবায়ের হোসেনের বল পুল করতে চেয়েছিলেন হার্মার। কিন্তু বল শর্ট লেগে থাকা মুমিনুলের হকের বগলে আটকে গেছে। সেই ওভারে তুলে মারতে গিয়ে তামিম ইকবালকে ক্যাচ দিয়েছেন ডেল স্টেইন।
চার ওভার পর বাভুমাকে জুবায়েরের ক্যাচ বানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে অলআউট করে দিয়েছেন মুস্তাফিজ। ওয়ানডের মতো টেস্ট অভিষেকেও আলো ছড়িয়ে ৩৭ রানের বিনিময়ে তাঁর শিকার চারটি। ৫৩ রানে জুবায়ের নিয়েছেন ৩ উইকেট।