নুসরাত হত্যার রায়ের কপি হাইকোর্টে
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার ২১১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি হাইকোর্টে পৌঁছেছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় এ রায়ের কপি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়।
এ বিষয়ে হাইকোর্টের স্পেশাল অফিসার সাইফুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, রায়ের কপি এসেছে। এখন দ্রুত এ মামলার শুনানির ব্যবস্থা করা হবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে রায়ের সহিমোহরি নকল (সার্টিফায়েড কপি) আসামিপক্ষের আইনজীবীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। মামলার মূল নথিতে থাকা ২১১ পৃষ্ঠার রায় কম্পিউটারের ফ্রন্ট সাইজের কারণে ২১৯ পৃষ্ঠায় দাঁড়িয়েছে। মামলার রায় ঘোষণার তারিখ থেকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পাবেন বলে বলা হয়েছে।
গত ২৪ অক্টোবর ফেনী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ রায়ের তিন পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপ পড়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১৬ জন আসামির সবাইকে মৃত্যৃদণ্ড ও প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন।
ফাঁসির আদেশ পাওয়া মামলার ১৬ জন হলেন—প্রধান আসামি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ-দৌলা, দুই নম্বর আসামি ফেনী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. নূর উদ্দিন, তিন নম্বর আসামি মাদ্রাসার ফাজিলের ছাত্র শাহাদাত হোসেন শামীম, চার নম্বর আসামি সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, পাঁচ নম্বর আসামি ছাত্রলীগকর্মী ও মাদ্রাসার ফাজিল বিভাগের ছাত্র মো. জোবায়ের, ছয় নম্বর আসামি চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ও মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী জাবেদ হোসেন, সাত নম্বর আসামি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক ও ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হাফেজ আবদুল কাদের এবং আট নম্বর আসামি মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আফছার উদ্দিন।
ক্রমানুসারে অন্য আসামিরা হলেন মাদ্রাসার ফাজিল প্রথম বর্ষ ও ফেনী পলিটেকনিক কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ আন্দোলনের সদস্য ও ছাত্রলীগকর্মী মো. শামীম, অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ আন্দোলনের সদস্য ও ফেনী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এমরান হোসেন মামুন, মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ইফতেখার উদ্দিন রানা, অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ আন্দোলনের সদস্য ও ছাত্রদলকর্মী হিসেবে পরিচিত মহিউদ্দিন শাকিল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রুহুল আমিন, মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী উম্মে সুলতানা পপি ও মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী কামরুন নাহার মণি।
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ- উদ-দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তাঁর মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করলে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচ দুর্বৃত্ত। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যু হয়।