ভারতে ফের পেছাল নূর হোসেনের অভিযোগ গঠন
নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া আবারো পেছালেন ভারতের একটি আদালত। দেশটিতে অনুপ্রবেশের মামলায় অভিযোগ গঠনের পরবর্তী দিন আগামী ২৪ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ বুধবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বারাসাত জেলা জজ প্রবীর কুমার মিশ্র এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে নূর হোসেনের সহযোগী খান সুমন দুদিন আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
খান সুমনের আইনজীবী অনুপ কুমার ঘোষ জানান, জামিনে মুক্ত সুমন গত ২২ জুন ও আজ বারাসাত আদালতে হাজির হননি। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া নূর হোসেন ও জামিনে মুক্ত অপর সহযোগী ওহাদুজ্জামান শামীম আদালতে হাজির ছিলেন বলে জানান তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা সদর বারাসাতের আদালতে মামলাটির কার্যক্রম চলছে। ২০১৪ সালের ১৪ জুন রাতে কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের অদূরে কৈখালি এলাকার একটি বাড়ি থেকে নূর হোসেন ও তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে বাগুইআটি থানার পুলিশ। এর পর ১৮ আগস্ট নূর হোসেন, ওহাদুজ্জামান শামীম ও খান সুমনের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে বারাসাত আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় বাগুইআটি থানার পুলিশ। এর পর থেকে নূর হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা নানা অজুহাতে আদালতে হাজির থাকায় বারবার পিছিয়ে যায় অভিযোগ গঠনের দিন। ২০১৪ সালের ১, ১৫ ও ২৯ সেপ্টেম্বর, ২৭ অক্টোবর, ১০ নভেম্বর, চলতি বছরের ২২ জুন অভিযোগ গঠনের দিন ছিল। এরই মধ্যে ওহাদুজ্জামান শামীম ও খান সুমন আদালত থেকে জামিনে যান। নূর হোসেন এ মুহূর্তে দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। তবে বিচার কার্যক্রমে গতি আনতে গত ২২ জুন বারাসাতের অতিরিক্ত জেলা জজের আদালত থেকে মামলাটি জেলা আদালতে স্থানান্তরিত করা হয়।
নূর হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল। সেই অ্যালার্টের সূত্র ধরে পশ্চিমবঙ্গের বিধাননগরের অ্যান্টিটেরোরিস্ট স্কোয়াডের গোয়েন্দারা নূর হোসেনের গতিবিধি অনুসরণ করে বাগুইআটি থানাকে জানান। সেইমতো নূর ও তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ের জামাই বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় দুটি মামলা করেন।
এ মামলায় র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হত্যার দায় স্বীকার করে র্যাবের ১৭ জনসহ ২২ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এবং ঘটনার সাক্ষী হিসেবে র্যাব সদস্যসহ ১৭ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। চলতি বছর ৮ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ মণ্ডল নূর হোসেন, র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রভুক্ত ২২ আসামি বাংলাদেশের কারাগারে : বর্তমানে র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। তাঁরা হলেন—র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা, উপপরিদর্শক পূর্ণেন্দু বালা, এএসআই বজলুর রহমান, আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার এমদাদুল হক ও নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, বাবুল হাসান, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, বেলাল হোসেন, ল্যান্স করপোরাল রুহুল আমিন, সিপাহি আবু তৈয়ব, নুরুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান নূর। এ ছাড়া কারাগারে আছেন নূর হোসেনের পাঁচ সহযোগী সিদ্ধিরগঞ্জের মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশার।