দূষণে যায় প্রাণ
আমি এখনো প্রকৃতির সন্তান আছি—পিঁপড়ের মতো; ব্যাঙ, কেঁচো বা কাঁকড়ার মতো। কারণ, প্রকৃতির বদলে যাওয়া বা দুর্যোগ প্রকৃতির সন্তান এই পোকামাকড়রাই নাকি টের পায়। আমিও তেমন করে টের পেয়েছিলাম গাজীপুরের বাতাসের দূষণের কথা। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটের দিন, সকাল-সন্ধ্যা ওই শহরে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে দেখেছি, আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। চোখ জ্বলছে। যদিও সেদিন অনেক কলকারখানাই বন্ধ ছিল। তার পরও বাতাসের বিষময় ছোবলে আক্রান্ত হয় আমার চোখ। আমি দুদিন চোখ খুলতে পারিনি। ঢাকা যে ভালো ছিল, সে কথা দাবি করতে পারি না। জীবিকার কারণে ঢাকায় আছি। ঢাকায় বাড়ি বা অফিসের বাইরে বের হলেই শরীরের অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়। চোখ জ্বলা, নিশ্বাস আটকে যাওয়া শুধু নয়, শরীরের রক্তের চাপের অস্বাভাবিকত্ব দেখা দেয়। হজমক্রিয়াতেও প্রভাব পড়ে। কিন্তু যে শহর ছাড়িয়ে উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমে চলে যাই। তখন শরীরে এই বিক্রিয়াগুলো ঘটেনা। শহরে ফিরতে থাকলে যন্ত্রণাগুলোও ফিরে আসতে থাকে। দেশসেরা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে, নানা পরীক্ষা করে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেছে, ঢাকা শহরকে আমি সইতে পারছি না। এই চূড়ান্ত রিপোর্ট বছর পাঁচেক আগেই জানা। এখন তো দেখছি বিশ্বের সেরা দূষণ-নগরীর তালিকায় উঠে এসেছে গাজীপুর, ঢাকা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দিল্লিতে খেলতে যাওয়ার পর আমরা সে শহরের বায়ুদূষণ দেখেছি। আঁতকে উঠেছিলাম, উদ্বিগ্ন হয়েছিলাম আমাদের খেলোয়াড়দের নিয়ে। কিন্তু ঢাকায় আমরা সবাই যে দূষণের ডোবায় ডুবে আছি, তা টের পেয়েছি সূচক দেখে। তবে প্রতিনিয়ত কাজের প্রয়োজনে যাঁদের পথে থাকতে হয়, তাঁরা নির্মাণকাজের ধুলো, গাড়ি ও বিভিন্ন কারখানার ধোঁয়া, শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের তাপে ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছেন। নীরব ঘাতক হয়ে উঠেছে বায়ুদূষণ।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর লাখো মানুষের মৃত্যু হয় বায়ুদূষণজনিত কারণে। আমরা জানি, পরিসংখ্যানের আওতার বাইরে আছে বিশাল জনগোষ্ঠী। তাঁরা হয়তো চিকিৎসাসেবা না পেয়ে বা নিয়েই মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করছেন। বায়ুদূষণ রোধে ব্যক্তিগত সচেতনতার বাইরে, প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে অবহেলা ও অদক্ষতাই বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়ার কারণ। শহরকে দূষণমুক্ত করতে সিটি করপোরেশন, পূর্ত বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগ, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, সেখানে তাঁরা ব্যর্থ হচ্ছে নিরন্তর। যার ফলাফল ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকা ক্রমশ প্রাণীর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়া।
লেখক : বার্তাপ্রধান, সময় টিভি