রাকিব হত্যায় বিউটি বেগমের জবানবন্দি
খুলনার শিশু রাকিব হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর আজ পুলিশের হেফাজতে থাকা আসামি বিউটি বেগম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে মুখ্য মহানগর হাকিম আয়শা আক্তার মৌসুমীর আদালতে এ জবানবন্দি দেন তিনি। পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বিউটি বেগম জবানবন্দিতে দোষ স্বীকার করেছেন। এ মামলায় এ পর্যন্ত তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ ছাড়া নিহত রাকিবের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আজ বাদ জুমা দোয়া-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বাদ জুমা টুটপাড়া সেন্ট্রাল মসজিদে এ দোয়া-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া-মাহফিলে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান, মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আলী হোসেন নামে এক ব্যক্তি রাকিবের মা লাকি বেগমের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায়ও একটি মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ এ পরিবারের নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
পরিবারের লোকজন জানান, রাকিবের মা লাকি বেগম এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি। তাঁর দিন-রাতের বেশির ভাগ সময় কাটে বাসার সামনে গলির রাস্তার মুখের দিকে চেয়ে। এ পথ দিয়েই একমাত্র ছেলে রাকিব বাসায় আসা-যাওয়া করত।
খুলনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস জানান, বিউটি বেগম ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে তিনি তদন্তের স্বার্থে জবানবন্দির বক্তব্য প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বিউটি বেগম এ মামলার এক নম্বর আসামি মো. শরিফের মা। বিউটি বেগম ঘটনার পর রাকিবের মা লাকি বেগমকে ছেলের অসুস্থতার খবর দিয়ে হাসপাতালে যেতে বলেছিলেন।
রাকিবের মা লাকি বেগম জানান, আলী হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাদা কাগজে সই নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এলাকাবাসীর প্রতিরোধে পরে পুলিশ তাঁকে আটক করে নিয়ে যায়। তিনি আরো অভিযোগ করেন, আসামি মো. শরীফের ভাই আরিফ বিভিন্নভাবে তাদের হুমকি দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে খুলনা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহ আলম বাদী হয়ে আলী হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। যদিও রাকিব হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী মোশতাক আহমেদ জানান, এ বিষয়টি মামলার সঙ্গে যুক্ত নয়। এ ঘটনা ভিন্ন।
নিহত রাকিবের বাবা মো. নূরুল আলম জানান, বিভিন্ন হুমকির মধ্যে পুলিশ তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। বাসার সামনে সব সময় পুলিশ থাকছে। তিনি আরো বলেন, রাকিব যখন শরিফের গ্যারেজে কাজ করত তখন তাকে নির্যাতন করা হতো। রাকিব তার মাকে তা জানিয়েছিল। ঘটনাটি শুনে তিনি রাকিবকে কাজে যেতে মানা করেছিলেন। তখন রাকিব বলেছিল, গ্যারেজের কাজ শিখতে বেশি দিন বাকি নাই। কাজ শেখা হয়ে গেলে সে অন্যত্র চলে যাবে।
মো. নূরুল আলম দুঃখ করে আরো বলেন, ছেলে তাঁকে বলেছিল সে বড় হয়ে বাবার মতো ড্রাইভার হতে চায়। কারণ লেখাপড়া শিখলেও চাকরি পাওয়া বড়ই কষ্টের।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী মোশতাক আহমেদ জানান, মামলার তদন্ত খুবই সন্তোষজনক। তবে তিনি কিছু মিডিয়াই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়াদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, এ মাসের মধ্যেই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব হবে।
এদিকে সোমবারের মধ্যে ময়নাতদন্তর রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে পুলিশ আশা করছে। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাহবুবুল আলম জানান, মামলার অগ্রগতি নিয়ে প্রতিদিনই পর্যালোচনা চলছে।
এদিকে শিশু ফোরাম শুক্রবার মানববন্ধন করার কর্মসূচি দিলেও পরে তা স্থগিত করা হয়। তবে কী কারণে মানববন্ধন স্থগিত করা হলো এ ব্যাপারে শিশু ফোরামের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।