বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বাড়ায় খুশি রাজনাথ সিং
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় তিনি খুব খুশি হয়েছেন। তার দাবি, এটা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচার রুখতে বিএসএফের সাফল্যের প্রমাণ। শনিবার ভারতের ‘গো দান রাষ্ট্রীয় মহাসঙ্ঘ’ এবং কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে রাজধানী নয়াদিল্লিতে গরু সংরক্ষণ নিয়ে এক যৌথ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে। ওই সম্মেলনে রাজনাথ সিং এ মন্তব্য করেন।
রাজনাথ সিং আরও বলেন, ‘সেদিন বাংলাদেশের হাইকমিশনার আমার সঙ্গে দেখা করতে এলে গরু পাচার নিয়ে আমরা কথা বলছিলাম, তখন রাষ্ট্রদূত জানালেন সীমান্তে এই কড়াকড়ি শুরু হওয়ার পর সে দেশে গরুর মাংসের দাম না কি ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। শুনে আমি খুশি হয়েছি।’
এছাড়া সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় ভারতে গো-হত্যা বন্ধে মোগল আমলের উদাহরণ টেনে নিয়ে আসলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী । রাজনাথ সিং বলেন, মোগলরাও বুঝতে পেরেছিল এই দেশ শাসন করতে গেলে গো-হত্যা বন্ধ করতে হবে। কিন্ত এই সত্যটা বুঝতে পারেনি ব্রিটিশরা।
ভারত ভূমিতে গরু সুরক্ষা প্রসঙ্গে রাজনাথ দাবি করেন, গোমাতা সুরক্ষা কর্মসূচিতে বিজেপি সরকার ৫০০ কোটি রুপি খরচ করেছে। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) জওয়ানদের নজরদারি ও তৎপরতায় বাংলাদেশে গরু পাচার অনেকটাই কমে গেছে।
ভারতে গরু সংরক্ষণ নিয়ে বলতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একসময় ভারতে মোগল সম্রাজ্যের কথা টেনে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘ভারতে মোগল সম্রাজ্য সম্পর্কে আমার যতটুকু জ্ঞান আছে তার ওপর ভিত্তি করে বলতে পারি, মোগল বাদশারা ভারতে শাসনদণ্ড হাতে নিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন, এ দেশে গো হত্যা করলে বেশি দিন তাঁরা এই দেশ শাসন করতে পারবেন না।’
রাজনাথ সিং আরো বলেন, ‘সম্রাট বাবর তাঁর উইলে লিখেছিলেন, একসঙ্গে দুটো জিনিস চলবে না। হয় মানুষের হৃদয় জিততে হবে নতুবা গরু খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে। মোগলরা এ দেশে পদার্পণ করে যে বিষয়টিকে বুঝতে পেরেছিলেন পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশরা ভারতে আসার পর সেই গো-হত্যার পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। ব্রিটিশরা ভারতীয়দের ভাবধারা না বুঝেই গো-হত্যা চালিয়ে যেতে থাকে।’
রাজনাথ উল্লেখ করেন, ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম কারণ ছিল কার্তুজে গরুর চর্বির ব্যবহার। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই মন্তব্যের মাধ্যমে সঠিক ভাবে কী বোঝাতে চেয়েছেন তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে স্পষ্ট না হলেও বিজেপি শাসিত মোদি সরকার ভারতে ক্ষমতার আসার পর দেশের বেশ কয়েকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যে গো-হত্যা নিষিদ্ধ হয়েছে। যদিও এত দিন গো-হত্যা নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে কোনো ঐতিহাসিক কারণ দেখানো হয়নি।
শনিবার কি তাহলে সেই কাজটাই করে দেখালেন রাজনাথ! এই প্রশ্ন উঠতে আরম্ভ হয়েছে বিভিন্ন মহলে। যদিও ভারতের কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী প্রকাশ জাভডেকর এর আগে জানিয়ে দিয়েছেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গো-হত্যা নিষিদ্ধ করবে না। তবে, কোনো রাজ্য চাইলে গো-হত্যা নিষিদ্ধ করতেই পারে।