আবার বাংলাদেশে এয়ার এশিয়া
কুয়ালালামপুরে যাওয়া-আসা করা যাবে খুব সস্তা ভাড়ায় –এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে আবার বাংলাদেশে এলো মালয়েশিয়াভিত্তিক এয়ারলাইনস এয়ার এশিয়া। এবার কেবল কুয়ালালামপুর নয়, সিঙ্গাপুর, সিডনিতেও অনেক কম খরচে যাওয়া যাবে বলে প্রচার চালানো হচ্ছে।
গত ২৯ জুন এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করার ঘোষণা দেয় এয়ার এশিয়া। তাদের পক্ষে যাত্রা শুরু করার ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশের বিক্রয় প্রতিনিধি (জিএসএ) টোটাল এয়ার সার্ভিসেস।
ছয় বছর আগে একই ধরনের (সস্তায় ভ্রমণের) বিজ্ঞাপন দিয়ে বাজারে এসেছিল এয়ার এশিয়া। বাংলাদেশের যাত্রীরা ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে কিনেছিল ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা টিকেট। বছর দুয়েক পর একদিন হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির ফ্লাইট।
ওই সময় এয়ার এশিয়ার কারণে হয়রানির শিকার হন কয়েক হাজার বাংলাদেশি যাত্রী। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী এয়ার এশিয়ার টিকেট কিনে দুর্ভোগে পড়েন। আবার বিজ্ঞাপন দেখে বহু যাত্রী আশঙ্কা করছেন এ ধরনের দুর্ভোগে পড়ার।
হয়রানি হওয়া সত্ত্বেও এয়ার এশিয়াকে কেন আবার বাংলাদেশে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তির কারণেই এয়ার এশিয়াকে ঢাকায় অনুমতি দিতে বাধ্য সরকার। কেননা মালয়েশিয়া সরকারই মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস, মালিন্দার পাশাপাশি এয়ার এশিয়ার নাম তালিকায় রেখেছে।
২০০৯ সালের ১২ মার্চ ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করে এয়ার এশিয়া। ছয় বছর আগে ঢাকা-কুয়ালালালামপুর রুটে কম মূল্যের ভাড়া ঘোষণা দিয়ে হৈ চৈ ফেলে দেয় ওই এয়ারলাইনস। টিকেট কিনতে হয় ক্রেডিট কার্ডে এবং ওই প্রতিষ্ঠানের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ে বছর খানেক আগেই। কিন্তু এর দুই বছর পরই ২০১১ সালের ১ জুলাই হঠাৎই এয়ার এশিয়া নিজেদের সব ফ্লাইট ‘স্থগিত’ করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থগিত নয়, চার বছর ধরে এয়ার এশিয়ার সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধই ছিল। চলতি বছর আবারও কমমূল্যে বিভিন্ন রুটে টিকেটের প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে এয়ার এশিয়া। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে খরচ পড়বে ২৪ হাজার ৪৯৯ টাকা। ঢাকা থেকে সিডনি পর্যন্ত পড়বে ৬৫ হাজার টাকা, ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৯৯ টাকা।
এয়ার এশিয়ার ঢাকার কোনো কার্যালয়ের ঠিকানা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি ঢাকা কার্যক্রম নিয়ে কোনো ওয়েবসাইট।
চার বছর আগে এয়ার এশিয়ার টিকেট কিনেছিলেন এমন কয়েকজন জানান, তখনো তাঁরা বহু চেষ্টা করেও এর ঢাকা কার্যালয় খুঁজে পাননি। যাত্রীদের কাছে যে নম্বরটি ছিল, তা সিঙ্গাপুরের একটি কলসেন্টার। আর সেই কলসেন্টারে ফোন করলে কার্যক্রম স্থগিত করার কথা জানানো হতো যাত্রীদের।
এ ব্যাপারে এয়ার এশিয়ার টিকেট বিক্রয় প্রতিনিধি (জিএসএ) টোটাল এয়ার সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদি আবদুল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘২০০৯ সালে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এয়ার এশিয়া এ দেশে কার্যক্রম শুরু করে। তখন আমাদের প্রতিষ্ঠান এয়ার এশিয়ার সঙ্গে ছিল না। ২০১২ সালে আমরা এয়ার এশিয়ার সঙ্গে কাজ শুরু করি। যা যা আনুষ্ঠানিকতা আছে তা সব সম্পন্ন করেই আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। অনলাইন ছাড়াও বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমেও এখন এয়ার এশিয়ার টিকেট কেনা যাবে।’
গত ১১ জুলাই হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে উদ্বোধনী ফ্লাইট কুয়ালালামপুর গেছে বলে জানান সাদি আবদুল্লাহ।
এয়ার এশিয়ার ঢাকা কার্যক্রম নিয়ে কোনো ওয়েবসাইট নেই কেন বা এয়ার এশিয়ার ওয়েবসাইটে ঢাকা কার্যক্রমের তথ্য কোথায় জানতে চাইলে আবদুল্লাহ দাবি করেন, ‘এয়ার এশিয়ার মূল ওয়েবসাইটেই তথ্য আছে।’ টোটাল এয়ার সার্ভিসেসের ঠিকানা জানতে চাইলে আবদুল্লাহ জানান, কার্যালয়টি বনানীতে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চার বছর আগে এ ধরনের কার্যক্রম দেখে পরে তা আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করি। পরে যখন এয়ার এশিয়া আবার কার্যক্রম শুরুর অনুমতি নেয়, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সব ধরনের কাগজপত্র নিরীক্ষা করা হয় এবং পাওনা যদি থাকে তা আদায় করা হয়। এখন পর্যন্ত সব ঠিক আছে বলেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘যেহেতু একবার এ রকম ঘটনা ঘটেছে, সে কারণে আমরা বিষয়টি নজরদারিতে রাখব।’