সাঙ্গাকারা-বন্দনায় ক্রিকেট-বিশ্ব
আর মাত্র একটি টেস্ট। তার পরই ক্রিকেট-বিশ্ব থেকে ঝরে পড়বে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র—শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা। সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের বিদায়ের ক্ষণে ক্রিকেটাঙ্গন আবেগে মথিত। ক্রিকেট-বিশ্ব মেতে উঠেছে সাঙ্গাকারা-বন্দনায়। সেই শ্রদ্ধাঞ্জলির নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হলো এনটিভির পাঠকের সামনে।
একটা কথা সোজাসুজি বলতে চাই। কুমার সাঙ্গাকারা শ্রীলঙ্কার সেরা ব্যাটসম্যান। অনেক শ্রীলঙ্কানের কাছেই অরবিন্দ ডি সিলভা আবেগগত কারণে প্রিয়। আমার কাছেও। কিন্তু পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, তাঁর (সাঙ্গাকারা) কী দুর্দান্ত অর্জন। ৬০টির বেশি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। তাকিয়ে দেখুন তাঁর তাক-লাগানো পরিসংখ্যানের দিকে। যেকোনো আন্তর্জাতিক খেলায় খুব অল্প মানুষই আছেন, যাঁরা সব দিক থেকে কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছেন। সেটা মাঠে হোক বা মাঠের বাইরে। কুমার তেমনই একজন খেলোয়াড়।—দীর্ঘদিনের সতীর্থ ও বন্ধু মাহেলা জয়াবর্ধনে
অনেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যানই সাঙ্গাকারাকে অনুসরণ করে। তাঁর কৌশল, যেভাবে তিনি রান করেন সেসব শিখতে চায়। পরিসংখ্যানই কথা বলে সাঙ্গার পক্ষে। তিনি দারুণ একজন মানুষও বটে। আমি তাঁর সঙ্গে অনেক কথা বলেছি। তিনি জীবনের শেষ দুই টেস্ট আমাদের বিপক্ষে খেলছেন বলে আমি ভীষণ গর্বিত। এটা সত্যিই একটা বিশেষ উপলক্ষ। তিনি ক্রিকেটের কিংবদন্তি। আমরা তাঁকে সম্মান দিতে পেরে গর্বিত।—ভারতের টেস্ট অধিনায়ক বিরাট কোহলি
শ্রীলঙ্কার জন্য কুমার এক বিস্ময়কর খেলোয়াড়। সে দেশকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। সে অবসর নিতে যাচ্ছে। কিন্তু এই দিন তো সব খেলোয়াড়ের জীবনেই আসবে। আমার মনে হয়, সে সঠিক সময়েই বিদায় নিচ্ছে। আমার মতে, ২০০২ সালের মার্চে লাহোরে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ২৩০ রানই তাঁর সেরা ইনিংস।—সাবেক সতীর্থ ও স্পিন কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন
আমার জীবনের জন্য ব্যাট করবে, এমন কাউকে বেছে নিতে বলা হলে আমি প্রতিবারই কুমারকে বেছে নেব।—শ্রীলঙ্কার সাবেক কোচ পল ফারব্রেস
আমি তাঁকে প্রথম দেখেছিলাম, তাঁর প্রথম ম্যাচেই। আমি সেই ম্যাচে ধারাভাষ্যকার ছিলাম। আর সে এখনো খেলছে। সে নিজেকে নিয়ে গেছে শীর্ষ দুই/তিন খেলোয়াড়ের মধ্যে। আর সেখান থেকে কেউ তাকে সরাতে পারেনি। হয়তো এক বছর বা ছয় মাস সে ফর্মহীনতায় ভুগেছে। কিন্তু এ ছাড়া তার কোনো তুলনা হয় না। সে পুরো বিশ্বজুড়ে খেলেছে আর প্রচুর রান করেছে। সে দ্বিশতক করত হাসতে হাসতে। স্যার ডোনাল্ড ব্রাডম্যানের সঙ্গেই শুধু তার তুলনা করা যায়। আমার মনে হয়, সাঙ্গা আর মাহেলা কখনোই তাদের প্রাপ্য সম্মান-প্রশংসা পায়নি।—ভারতীয় দলের পরিচালক রবি শাস্ত্রী
শ্রীলঙ্কার কোচ থাকার সময় তার সঙ্গে চার বছর কাজ করা সত্যিই আমার জন্য অনেক আনন্দদায়ক ব্যাপার ছিল। সে দারুণ একজন মানুষ। তাকে বন্ধু ভাবতে পারা, তার সংস্পর্শে থাকা ছিল আমার জন্য খুবই আনন্দের। সে সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তার মতো কিংবদন্তির সঙ্গে একই সাজঘরে থাকা আমার জন্য ছিল বিশাল ব্যাপার।—শ্রীলঙ্কার সাবেক কোচ ট্রেভর বেইলিস
মাহেলার সঙ্গে সাঙ্গাকারাও দীর্ঘদিন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের মেরুদণ্ড ছিল। তার সঙ্গে এক সাজঘরে থাকতে পেরে ও খেলতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত।—শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস
তাঁর নিজস্ব একটা ব্যাটিং স্টাইল আছে। বাঁহাতিদের খেলা দেখতে এমনিতেই ভালো লাগে। তাঁরটাও তেমন। অবশ্যই প্রতিপক্ষ হিসেবে আমি তাঁর ব্যাটিং খুব বেশি উপভোগ করতে পারিনি। তিনি শুধু শ্রীলঙ্কানদের কাছে নয়, বিশ্বজুড়েই ক্রিকেটারদের জন্য এক আদর্শ ব্যক্তিত্ব। আমি তাঁকে খুব বিপজ্জনক খেলোয়াড় মনে করতাম। কারণ, তাঁর একটা বিশেষ ক্ষমতা ছিল। এমনকি উইকেটে অস্বচ্ছন্দ মনে হলেও তিনি অনেক রান করতে পারতেন।—ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার
সে সেরাদের মধ্যে অন্যতম। এমন অনেকেই আছে, যারা খেলার মাঠে অনেক বিস্ময় উপহার দিতে পারে। কিন্তু তারা মাঠের বাইরে তা পারে না। সাঙ্গা দুটোই করতে পেরেছে। ২০০৩ সালে লাহোরে সে ওয়াকার ইউনিসের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে দ্বিশতক করেছিল। সে সময় ওয়াকার নিজের সেরা ছন্দে ছিল। আমার মতে, সেটাই তার সেরা ইনিংস। অবশ্য তার এ রকম আরো দারুণ ইনিংস আছে।—শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সভাপতি ও সাবেক ক্রিকেটার সিদাথ ওয়েটেমুনি
আমি ব্যাটসম্যান আর মানুষ দুই ভূমিকাতেই কুমার সাঙ্গাকারাকে শ্রদ্ধা করি। লর্ডসে কাউড্রে বক্তৃতায় দেওয়া তার বক্তব্য শুধু বুদ্ধিদীপ্তই ছিল না, দারুণ সাহসীও ছিল। আমাকে অবশ্য তা অবাক করেনি। কারণ সে যেভাবে ক্রিকেট খেলেছে এবং খেলাটা নিয়ে যে রকম গভীরভাবে ভেবেছে, তাতে সেটাই স্বাভাবিক ছিল। তার মতো ক্রিকেট-মস্তিষ্ক এই খেলার জন্য ভীষণ দরকার। ব্যাটসম্যান হিসেবে সে অসাধারণ। তার ব্যাটিং দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। সে যেভাবে সোজা ব্যাটে খেলে, স্পিনারদের মোকাবিলা করে সবকিছুই খুব ভালো লাগে। আশা করি, ক্রিকেটে তার অবদান এখনই শেষ হয়ে যাবে না।—অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে ধারাভাষ্যকার ইয়ান চ্যাপেল