মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে মৃত্যুর দিকেই যাত্রা!
ভাগ্য পরিবর্তন তো হয়ইনি, উল্টো জীবনধারণের সামান্য রসদটুকু পাচ্ছেন না ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হতাহত মাদারীপুর আওয়ামী লীগের কর্মী ও তাদের পরিবার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন অনেকে। আর যাঁরা মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে ফিরে এসেছেন, তাঁরাও একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর দিকে। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে শরীরে রয়ে যাওয়া গ্রেনেডের স্প্লিন্টারগুলো একটু একটু করে বিকল করে দিচ্ছে তাঁদের।
২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন মাদারীপুরের চারজন। আর আহত হন পাঁচজন। আহতরা স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় কাতরান এখনো। আর বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় নিহত চারজনের বাড়িতে আজো থামেনি মাতম।
সেদিনের সেই বর্বরোচিত হামলায় চোখ হারিয়ে জেলা সদরের ছিলারচর ইউনিয়নের পশ্চিম রঘুরামপুর গ্রামের প্রাণকৃষ্ণ পাননি সামান্য স্বীকৃতিটুকুও। এখন চলছেন সহধর্মিণীর আয়ের ওপর। তাঁর স্ত্রী গোবর দিয়ে জ্বালানি বানিয়ে বিক্রি করে ছয় সন্তানসহ আটজনের সংসার চালান। ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা পেলেও এর পর আর কোনো সাহায্যই পাননি তিনি।
প্রাণকৃষ্ণ বলেন, ‘আমি দেড় মাস পর্যন্ত ভর্তি ছিলাম। দেড় মাসে আমার অনেক টাকা-পয়সা গেছে। মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় আমার চিকিৎসা হইছে। কোনো মানষি কয় নাই আমি বাঁচুম।’
আর কালকিনি পৌরসভার কবিরের বাঁ হাত ধীরে ধীরে অচল হয়ে যাচ্ছে। কাঁচা সবজি বিক্রি করে জীবন চালাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁর। একই পৌরসভার সাইদুর মাথায়-বুকে-হাতে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ঘটনার পর সরকারের কাছ থেকে সামান্য কিছু সাহায্য পেলেও তা জীবনমান উন্নয়নে তেমন কোনো কাজে আসেনি। আর উন্নত চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছেন আহতরা।
সেদিনের সে হামলায় নিহত হন মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার শ্রমিক লীগ নেতা নাসির উদ্দিন, একই উপজেলার মোস্তাক আহাম্মেদ ও রাজৈরের সুফিয়া বেগম এবং হোসেনপুর ইউনিয়নের চাঁনপট্টি গ্রামে যুবলীগ নেতা নিহত লিটন মুন্সীর পরিবারেও চলে আহাজারি। হামলার ১১ বছরেও দোষীদের বিচার না হওয়ায় শুধু আর্তনাদই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আজ চরম ক্ষুব্ধ।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে লিটন মুন্সীর মা আছিয়া বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার বাবা (লিটন মুন্সী) বলেছিল—মা, তোমার পেটের পাথর অপারেশন করে আনব। মাত্র ১০ দিন অপেক্ষা করো। আর নয় দিনের মাথায় বাবা লাশ হয়ে ফিরেছে।’
নিহত সেন্টুর স্ত্রী আইরিন পারভীন বলেন, ‘স্বামীকে হারিয়ে আমরা পথে বসে গেছি। খেয়ে-না খেয়ে কোনোরকমভাবে বেঁচে আছি।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কামালউদ্দিন বিশ্বাস জানান, আহত ও নিহতদের সাহায্যে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আর আহতদের জন্য দ্রুত সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে কিছুটা হলেও তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি মাদারীপুরের সচেতন মহলের।