ফিল্টারিং মাস্কের নামে কাপড়ের মুখোশ বিক্রি!
কম দামি কাপড়ের ওপর লাগানো হয়েছে একটি ফিল্টারের খাপ। কিন্তু খাপের ভেতরে নেই ‘ফিল্টারিং সিস্টেম’, অর্থাৎ বাতাস প্রবাহিত হওয়ার জাল কাপড়। কাপড়ের ভেতরে বাতাস ঢোকারও কোনো সুযোগ নেই। কাপড়ের দুই পাশে লাগানো হয়েছে ফিতা। দেখতে অবিকল ফিল্টার মাস্কের মতো। এই কাপড়ের মুখোশই পাঁচ গুণ বেশি দামে পাইকারি ১০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছিল রাজধানীর মিটফোর্ডের কিছু দোকানে।
এ রকম কিছু দোকানে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে অভিযান চালায় র্যাব। সেখানে শুধু নকল মাস্ক নয়, মাস্ক ছাড়াও বেশি দামে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করা হচ্ছিল। অভিযান পরিচালনা করেন র্যাবের প্রধান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এই অভিযানে আটটি ফার্মেসিকে মোট ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একজনকে দেওয়া হয় এক বছরের কারাদণ্ড।
করোনাভাইরাস ঠেকাতে সতর্কতামূলক এসব পণ্য-সংক্রান্ত অভিযানের খবর মিটফোর্ডের ফার্মেসিগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে দ্রুতই অধিকাংশ ফার্মেসি বন্ধ করে সরে যান দোকানিরা। এরপর আর সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত কাউকেই দোকান খুলতে দেখা যায়নি।
এদিকে শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি মিটফোর্ডে গিয়েছিলেন মাস্ক কিনতে। কিন্তু তিনি কোনো ফার্মেসি থেকে মাস্ক পাননি। শহিদুল বলেন, ‘বাড়ির নিচের একটি ফার্মেসিতে গিয়েছিলাম মাস্ক কিনতে। দাম বলে ২০০ টাকা। তাই এখানে পারিবারের জন্য পাঁচটি মাস্ক কিনতে এসেছি। এসে দেখি সব দোকান বন্ধ।’
অভিযান চলাকালে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম আনোয়ার সার্জিক্যাল ফার্মেসির গুদামে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, গুদামের ভেতরে বেশ কিছু মাস্ক বস্তাবন্দি করে রাখা হয়েছে। বস্তা খুলে মাস্কগুলো দেখেন সারওয়ার আলম। তখন সারওয়ার আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এসব মাস্ক একেবারেই বাজে মানের। অধিকাংশ মাস্ক বিক্রি করছে ফিল্টার মাস্ক বলে। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, মাস্কগুলোতে ফিল্টারের খাপ লাগানো থাকলেও নেই ফিল্টারিং সিস্টেম। এই ফিল্টারের ভেতরে বাতাস ঢুকবে না। অথচ বিক্রি করছে ফিল্টার মাস্ক হিসেবে। মাস্ক কেনার সময় ক্রেতারা এত কিছু দেখে কিনতে পারবেন না। প্রথমে তো তারা বুঝতেই পারবেন না। সেই সুযোগগুলো গ্রহণ করে এই চক্র।’
র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘১০ থেকে ১৫ টাকার কাপড়ে একটি খাপ লাগিয়ে বিক্রি করছে ১০০ টাকা পাইকারি। এই মাস্ক বাইরে বিক্রি হবে অন্তত দেড়শ বা দুইশ টাকা। কাপড়ের ওপর ভুয়া ফিল্টার লাগিয়ে গুদামজাত ও বিক্রির অপরাধে আনোয়ার সার্জিক্যাল ফার্মেসিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সিলগালা করা হয়েছে ফার্মেসি।’
সারওয়ার আলম আরো বলেন, ‘মাস্কের পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছিল। শুধু এটা নয়, একটি দোকানে সরকারি ও নকল ওষুধ বিক্রি করার কারণে দেওয়ান এন্টারপ্রাইজের মালিককে এক বছরের কারাদণ্ড ও ছয় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাও দায়ের করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এ ছাড়া তপু অ্যান্ড ব্রাদার্সকে দুই লাখ টাকা জরিমানা, আল ওয়ারি সার্জিক্যালকে এক লাখ টাকা, মেসার্স লোকনাথ ড্রাগ হাউসকে ৭৫ হাজার টাকা, মা মেডিসিন হাউসকে দেড় লাখ টাকা, ওয়েব মেডিসিনকে তিন লাখ টাকা এবং সার্জি গ্লো হাউসকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মিটফোর্ড থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় শাহবাগের অন্তত ১৫টি ফার্মেসিতে গিয়ে খোঁজ করা হয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার। কিন্তু সেখানে কোনো ফার্মেসিতে গিয়ে তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। নাঈম নামের একজন বলেন, ‘এখানে একটি দোকানেও হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই। নেই মানে এরা বিক্রি করছে না। বেশি দামের আশায় সব মজুদ করেছে। আর আমাদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।’
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে হেরা ফার্মেসির ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘না থাকার কারণ হচ্ছে আমরাই কোম্পানি থেকে সাপ্লাই পাচ্ছি না। এদিকে আবার একজনের একটি দরকার, তিনি কিনছেন পাঁচটি। তাহলে আমরা যাব কোথায়? তবে কেউ কেউ যে মজুদ করছে, এটাও সত্য।’
জিলানী ফার্মেসির ম্যানেজার শামীম হোসেন বলেন, ‘ফার্মেসিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই বলে লিখে রেখেছি এখানে বিক্রি হয় না। সাপ্লাই পাচ্ছি না বলে বিক্রিও করতে পারছি না।’