করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের কী ওষুধ দেওয়া হচ্ছে?
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বহু দেশে। বাদ যায়নি বাংলাদেশও। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ওপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অন্য রোগে ব্যবহৃত প্রায় ৩০০টি ভিন্ন ওষুধ ও পরীক্ষামূলক থেরাপি প্রয়োগ করে দেখা হচ্ছে, কোনটি কার্যকর প্রভাব ফেলে। এসব ওষুধের মধ্যে ইবোলা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবহৃত ‘রেমডেসিভির’ অন্যতম। এ ছাড়া আরো কয়েকটি ওষুধও করোনার বিরুদ্ধ আংশিক কার্যকর বলে প্রমাণ মিলেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। রোগীর উপসর্গ বিচার করে ওষুধ দেওয়া হয়। যেমন—ভারতে করোনায় আক্রান্তদের জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল, কখনো বা ব্যথা কমানোর ওষুধ ইত্যাদি দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি রোগী যেন পর্যাপ্ত পানি পান করেন, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ খবর জানিয়েছে।
করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার ৩ শতাংশের সামান্য বেশি। আর অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে তাঁদের নিজেদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাই করোনা মোকাবিলা করতে সক্ষম। করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহান শহর থেকে ফেরা ভারতের কেরালা রাজ্যের তিন ছাত্রের—ভারতের প্রথম তিন করোনা রোগী—ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসায় ভালো সাড়া দেন ওই তিনজন এবং সেরে উঠে বাড়িও ফিরে যান।
করোনা প্রতিকারে ‘রেমডেসিভির’ ওষুধের ইতিবাচক প্রভাবের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মেলেনি এখনো। আগামী মাসেই ওই ফলাফল পাওয়া যাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইতালির চিকিৎসকরা করোনাভাইরাসে গুরুতর আক্রান্ত রোগীদের ওপর এরই মধ্যে ‘রেমডেসিভির’ প্রয়োগ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ওষুধটির উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ নভেল করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় এইচআইভির (এইডস রোগের প্রতিকারে ব্যবহৃত) দুটি ওষুধ ‘গণস্বাস্থ্যে জরুরিকালীন ব্যবহার’ করার অনুমোদন পেয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘লোপিনাভির’ ও ‘রিটোনাভির’—এ দুটি ওষুধের মিশ্রণ জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার অনুমোদন করা হয়েছে। তবে দুটি ওষুধের ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওষুধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকার কারণে সেগুলো শুধু ‘অসুরক্ষিত’ রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে।
তবে গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্যতম বিজ্ঞানী ডা. সৌম্য স্বামীনাথন বলেছেন, ‘চীনে (এই মিশ্রণের) ছোটখাটো কিছু পরীক্ষার ফল নেতিবাচক হয়েছে।’
এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ওপর অ্যান্টি-এইচআইভি ওষুধ ক্যালেট্রাসহ হেপাটাইটিস ও ম্যালেরিয়া রোগীদের ওপর ব্যবহৃত ওষুধও প্রয়োগ করছেন চিকিৎসকরা।