অ্যালার্জি, সর্দি-কাশি, ফ্লু নাকি করোনা, পার্থক্য বুঝবেন কীভাবে?
এ মুহূর্তে সারা বিশ্বের ত্রাসের আরেক নাম করোনাভাইরাস। শুরুটা চীনে হলেও করোনার থাবা থেকে বাঁচতে পারেনি বিশ্বের অনেক দেশ। বাংলাদেশসহ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, নেপাল, মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার অনেক দেশে। সংক্রমণ ছড়িয়েছে আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও ওশেনিয়াতেও। প্রাথমিকভাবে করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগের প্রায় সব লক্ষণই অ্যালার্জি, সাধারণ সর্দি-কাশি বা জ্বরের মতো। তাই আপনি যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন, তা বুঝবেন কীভাবে?
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
অ্যালার্জি
চোখ চুলকাচ্ছে? নাক দিয়ে পানি পড়ছে? তাহলে খুব সম্ভবত আপনার অ্যালার্জি হয়েছে কিংবা ঠাণ্ডা লেগেছে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক মার্কিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান মায়ো ক্লিনিকের চিকিৎসক অধ্যাপক গ্রেগ পোল্যান্ড বলেন, ‘মৌসুমি অ্যালার্জির কারণে নাক ও চোখ আক্রান্ত হয়। এমন অ্যালার্জির কারণে নাকেই বেশি সমস্যা হয়। এর সঙ্গে যদি শরীরে র্যাশ না হয়, তাহলে মাথাব্যথাও করতে পারে।’
সাধারণ সর্দি-কাশি বনাম করোনা
ঠাণ্ডাজনিত সর্দি-কাশিসহ গলাব্যথার সঙ্গে করোনাভাইরাসের পার্থক্য রয়েছে। যেহেতু করোনাভাইরাস ‘লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টে’ (মানবদেহের শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যবস্থার নিম্নাঞ্চল) আক্রমণ করে, তাই এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শুকনো কাশি, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়াসহ নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই আক্রান্তের গলায় ব্যথা থাকবে না।
ফ্লু বনাম সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা
সাধারণ ঠাণ্ডার সমস্যা হলে গলা খুসখুস করার পাশাপাশি নাক দিয়ে পানি পড়া এবং কাশির মতো লক্ষণ দেখা দেবে। এর সঙ্গে হতে পারে মাথাব্যথা ও সামান্য জ্বর। এসব সমস্যা বেশ কয়েক দিন ভোগায় রোগীদের।
অন্যদিকে ফ্লু হলে মাথাসহ গা-হাত-পায়ে ব্যথা, শুকনো কাশি, গলা ভাঙাসহ গলায় ব্যথা ও প্রচণ্ড জ্বরে রোগী কাবু হয়ে যাবেন। আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর কখনো কখনো ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। আক্রান্তের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে।
এ ছাড়া সাধারণ ঠাণ্ডা লেগে জ্বর হলে দু-তিন দিনের মধ্যেই তা কমে যায়। এক সপ্তাহের মধ্যে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। অন্যদিকে ফ্লু হলে জ্বর কমতেই অন্তত এক সপ্তাহ সময় লেগে যায়। আর সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরো অনেক দিন সময় লাগে।
করোনাভাইরাসের সাধারণ লক্ষণ
আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, শুকনো কাশি, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, মাংসপেশিতে যন্ত্রণাসহ ক্লান্তবোধ করবেন।
করোনভাইরাসের আরো যত লক্ষণ
আক্রান্ত ব্যক্তির বুকে কফ জমে যাওয়াসহ মাথাব্যথা, কাশির সঙ্গে রক্ত পড়াসহ ডায়রিয়া হতে পারে।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনই এর পাশাপাশি একটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন, তা হচ্ছে—করোনার কারণে সাধারণ্যে সৃষ্ট স্বাস্থ্যবিষয়ক উদ্বেগের কারণে কিছু অনিশ্চয়তা সঙ্গে নিয়েই আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে।
শেষ কথা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবকিছুর মূল কথা হচ্ছে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা। হাত না ধুয়ে নিজের মুখমণ্ডল স্পর্শ করবেন না। সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য নিয়মিত ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনা নিয়ে সতর্ক থাকা, সচেতন থাকা, নিজের স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিষয়গুলো আমলে নেওয়াসহ যেকোনো উপসর্গ পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নিজের চারপাশের পরিস্থিতি আপনাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে কি না, তা খুঁটিয়ে দেখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। তবে এমনও হতে পারে, করোনা নয়, আপনার হয়তো কেবল অ্যালার্জির ওষুধ আর একটু বিশ্রাম প্রয়োজন।