করোনায় বিশ্বে মৃত বেড়ে ৫৪০৩, ভয়াবহ পরিস্থিতি ইউরোপের
সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে পাঁচ হাজার ৪০৩ জনে দাঁড়িয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৪৪ হাজার ৩৩৬ জন মানুষ। এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্তের পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৭০ হাজার ৮৬৪ জন। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে, চীনে করোনার সংক্রমণ কমে এলেও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে ইতালি। এখন পর্যন্ত ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ২৬৬ জনের। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২৫০ জনের, যা ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একদিনের হিসাবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর। এ ছাড়া দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৬৬০ জন মানুষ।
ইরানেও করোনা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। সেখানে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৫১৪ জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৩৬৪ জন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ জনে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার ৮৬ জনে পৌঁছেছে।
করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গরাজ্য এবং ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রিয়া, লিথুয়ানিয়া, জার্মানি, পর্তুগাল ও আলজেরিয়ায় স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে, ইউরোপের দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর।
এ ছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ পুরো বিশ্বের কাছে এই ভাইরাস রীতিমতো আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগরি ট্রুডোও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। সে কারণে হোম আইসোলেশনে চলে গেছেন এই দম্পতি। অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডাটনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার নিজেই তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতের কর্ণাটক রাজ্য ও রাজধানী নয়াদিল্লিতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় আর কোথায় মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে ৬৯ বছর বয়সী এক নারী ও গত মঙ্গলবার কর্ণাটকে ৭৬ বছরের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
এদিকে ভারতের নয়াদিল্লিতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর স্বাস্থ্য ছাড়পত্র নিয়ে আজ শনিবার দেশে ফিরতে যাচ্ছেন ২৩ বাংলাদেশি। বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় আজ বিকেলে ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে নয়াদিল্লি ছাড়বেন তাঁরা। ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে তাঁদেরও চীনের উহান শহর থেকে ফেরত এনেছিল ভারত।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে আরোহনের অভিযান সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সব দেশের পর্যটকদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসাও বন্ধ করে দিয়েছে নেপাল।
এদিকে, ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে মার্কিন ও চীনা কর্মকর্তাদের পরস্পরবিরোধী দাবি উড়িয়ে দিয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এ ক্ষেত্রে গবেষকদের মতামতকেই প্রাধান্য দেবে বেইজিং।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং সুয়াং বলেন, ‘করোনার উৎপত্তি নিয়ে সম্প্রতি নানা ধরনের বক্তব্য আসছে। মার্কিন কর্মকর্তা এবং কংগ্রেস সদস্যরা এ নিয়ে চীনকে দায়ী করছেন। চীনের এক কর্মকর্তাও এ ভাইরাস ছড়ানোর জন্য মার্কিন সেনাদের দায়ী করেছেন। তবে চীন সরকার বিশ্বাস করে, এটি বিজ্ঞানসম্মত বিষয়, তাই এ ক্ষেত্রে গবেষকদের মতামতই গুরুত্বপূর্ণ।’
এদিকে ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি ট্যুরিজম সংশ্লিষ্ট পাঁচ কোটি মানুষের চাকরি হুমকির মুখে পড়েছে।