আবার ‘রানা প্লাজা’ বন্ধ
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্র বাধা কাটিয়ে উঠলেও আবার তা আটকে গেল। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে পরী মণি ও সায়মন অভিনীত ছবিটির প্রদর্শনী সাময়িকভাবে স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র অধিশাখা থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
‘রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে’ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জিএন নজমুল হোসেন খান স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সিভিল রিভিউ পিটিশন নং ১৯১/২০১৫ শুনানিকালে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণের আলোকে ফিল্ম সেন্সর আপিল কমিটি কর্তৃক রানা প্লাজা নামক চলচ্চিত্রের আপিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত সেন্সর সার্টিফিকেট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলো এবং রানা প্লাজা নামক চলচ্চিত্র সমগ্র বাংলাদেশে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলো।’ এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে সকালে ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীর ওপরে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারকের দেওয়া স্থিতাদেশের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই রায়ে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনে বাধা কেটে যায়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
সাভারের রানা প্লাজা ধসে হাজার হাজার শ্রমিক আহত-নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রটি গত ৪ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এতে নানা ভীতিকর দৃশ্য আছে, এমন অভিযোগ তুলে গত ২০ আগস্ট হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি। ২৪ আগস্ট শুনানি শেষে দেশে-বিদেশের প্রেক্ষাগৃহে বা অন্য কোনো মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শন ও সম্প্রচারের ওপর ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট।
পরে ছবিটির প্রযোজক শামীমা আক্তার হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনে হাইকোর্টের দেওয়া ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা খারিজ করে দেন।
কিন্তু প্রদর্শন ঠেকাতে মামলার আবেদনকারী [পিটিশনার] সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতির দ্বারস্থ হন। ১০ সেপ্টেম্বরে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ‘রানা প্লাজা’ ছবিটির প্রদর্শন ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার আদেশ দেন। পুনর্বিবেচনার আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ছবিটির প্রদর্শনীর ওপরে স্থিতাদেশ জারি করেন বিচারক। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আবেদনটি আপিল বিভাগের একটি নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আপত্তি
২০১৩ সালে সাভার বাজারের কাছে রানা প্লাজা ধসের ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে পোশাককর্মী রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রটি। রেশমা উদ্ধারের ওই ঘটনা তখন বিশ্ব গণমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। শামীম আক্তার প্রযোজিত ও নজরুল ইসলাম খান পরিচালিত ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য দুই ঘণ্টা ১৭ মিনিট ১৬ সেকেন্ড।
মামলার বিবরণে জানা যায়, রানা প্লাজা ধ্বংস ও গার্মেন্টকর্মী রেশমাকে উদ্ধার করা নিয়ে নির্মিত বাংলা চলচ্চিত্র ‘রানা প্লাজা’ প্রদর্শনের জন্য সেন্সর বোর্ডে পাঠালে সেন্সর বোর্ড তা প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সেন্সর বোর্ডের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছবিটির প্রযোজক শামীম আক্তার তা প্রদর্শনের অনুমোদনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করলে গত ৪ মার্চ ছবিটির কিছু দৃশ্য কর্তনসাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। পরে সেন্সর বোর্ড হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ছবিটির পাঁচটি দৃশ্য কর্তন ও পরিবর্তনের জন্য পরিচালক ও প্রযোজককে নির্দেশ দেন।
ওই পাঁচটি পরিবর্তন হলো : চলচ্চিত্রে নায়িকার নাম ‘রেশমা’ বাদ দেওয়া, ১৭ দিন পর ছবিতে রেশমাকে উদ্ধারের দৃশ্য বাদ দেওয়া, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নাম ব্যবহার বাদ দেওয়া, ওই সময়ের ঘটনার টেলিভিশন ফুটেজের কাটা অংশ বাদ দেওয়া, ‘আমরা কি খাট ভাঙ্গিনী?’ এই দৃশ্য ও সংলাপ বাদ দেওয়া।
সেন্সর বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী ছবির কিছু দৃশ্য কর্তন করা হলেও পুরোপুরি আদেশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। এর পর সেন্সর বোর্ড ছবিটি প্রদর্শনের অনুমোদন না দিলে সেন্সর বোর্ডের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার লিগ্যাল নোটিশ পাঠান ছবিটির প্রযোজক শামীম আক্তার। পরে সেন্সর বোর্ড গত ১৬ জুলাই ছবিটির অনুমোদন দেয়, যা গত ৪ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল।
পরে ছবিটি প্রদর্শন বন্ধ করতে বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বাদী হয়ে এক রিট দায়ের করেন। আবেদনে বলা হয়, ‘রানা প্লাজা নিয়ে নির্মিত ছবিতে দেশের পোশাকশিল্পের বিষয়ে খারাপ মনোভাব তুলে ধরা হয়েছে। এ ছবি প্রদর্শিত হলে বিদেশে আমাদের পোশাক খাত আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’