রানা প্লাজা
‘সত্য ঘটনা নিয়ে আর কেউ ছবি বানাবে না’
‘রানা প্লাজা’ ছবিটি নিয়ে টানাপড়েন শেষই হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনে বাধা কাটিয়ে উঠলেও রাষ্ট্রপতির আদেশে আবারও তা আটকে গেল। এ নিয়ে পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘একটি সত্য ঘটনার অলোকে এরপর আর কেউ ছবি বানাতে রাজি হবে না। বর্তমান সময়ের গল্প আমরা যদি তুলে ধরতে না পারি, তাহলে একটি ছবি কীভাবে আমাদের সমাজ বদলাতে কাজ করবে? আল্লাহর ওপর আমার ভরসা আছে। বারবার আমাদের পক্ষেই রায় আসছে। এবারও তাই হবে। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’
পরী মণির কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো অনুভূতি নেই। একটা ক্ষতে আপনি বারবার আঘাত দিলে সেই ক্ষত অনুভূতিহীন হয়ে যায়। আমাদের কিছু বলার নেই।’
আজ বৃহস্পতিবার ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী সাময়িকভাবে স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশে বলা হয়, ‘সিভিল রিভিউ পিটিশন নং ১৯১/২০১৫ শুনানিকালে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণের আলোকে ফিল্ম সেন্সর আপিল কমিটি কর্তৃক রানা প্লাজা নামক চলচ্চিত্রের আপিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত সেন্সর সার্টিফিকেট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলো এবং রানা প্লাজা নামক চলচ্চিত্র সমগ্র বাংলাদেশে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলো।’ এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে সকালে ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী বন্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই রায়ে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনে বাধা কেটে যায়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর সারা বিশ্বে আলোচিত রানা প্লাজা ধস নিয়ে নির্মিত ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওই দিন নির্ধারণ করা হয়।
গত ১০ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ছবিটি প্রদর্শনে স্থিতাবস্থা জারি করেন এবং এ বিষয়ে শুনানির জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ করেন। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ১৪ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানি পিছিয়ে নির্ধারণ করা হয় আজ ১৭ সেপ্টেম্বর। আজ প্রথমে প্রদর্শনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিলেও পরে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ছবিটির ভাগ্য।
২০১৩ সালে সাভার বাজারের কাছে রানা প্লাজা ধসের ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে পোশাককর্মী রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রটি। রেশমাকে উদ্ধারের ওই ঘটনা তখন বিশ্ব গণমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। শামীম আক্তার প্রযোজিত ও নজরুল ইসলাম খান পরিচালিত ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য দুই ঘণ্টা ১৭ মিনিট ১৬ সেকেন্ড।
মামলার বিবরণে জানা যায়, রানা প্লাজা ধ্স ও গার্মেন্টকর্মী রেশমাকে উদ্ধার করা নিয়ে নির্মিত বাংলা চলচ্চিত্র ‘রানা প্লাজা’ প্রদর্শনের জন্য সেন্সর বোর্ডে পাঠালে সেন্সর বোর্ড তা প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সেন্সর বোর্ডের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছবিটির প্রযোজক শামীম আক্তার তা প্রদর্শনের অনুমোদনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করলে গত ৪ মার্চ ছবিটির কিছু দৃশ্য কর্তনসাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। পরে সেন্সর বোর্ড হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ছবিটির পাঁচটি দৃশ্য কর্তন ও পরিবর্তনের জন্য পরিচালক ও প্রযোজককে নির্দেশ দেন।
ওই পাঁচটি পরিবর্তন হলো- চলচ্চিত্রে নায়িকার নাম ‘রেশমা’ বাদ দেওয়া, ১৭ দিন পর ছবিতে রেশমাকে উদ্ধারের দৃশ্য বাদ দেওয়া, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নাম ব্যবহার বাদ দেওয়া, ওই সময়ের ঘটনার টেলিভিশন ফুটেজের কাটা অংশ বাদ দেওয়া, ‘আমরা কি খাট ভাঙ্গিনী?’ এই দৃশ্য ও সংলাপ বাদ দেওয়া।
সেন্সর বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী ছবির কিছু দৃশ্য কর্তন করা হলেও পুরোপুরি আদেশ মারা হয়নি। এরপর সেন্সর বোর্ড ছবিটি প্রদর্শনের অনুমোদন না দিলে সেন্সর বোর্ডের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার লিগ্যাল নোটিশ পাঠান ছবিটির প্রযোজক শামীম আক্তার। পরে সেন্সর বোর্ড গত ১৬ জুলাই ছবিটির অনুমোদন দেয়, যা আগামী ৪ সেপ্টেম্বর প্রদর্শনীর কথা ছিল।
পরে ছবিটি প্রদর্শন বন্ধ করতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বাদী হয়ে এ রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে বলা হয়, ‘রানা প্লাজা নিয়ে নির্মিত ছবিতে দেশের পোশাক শিল্পের বিষয়ে খারাপ মনোভাব তুলে ধরা হয়েছে। এ ছবি প্রদর্শিত হলে বিদেশে আমাদের পোশাক খাত আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’