বরগুনায় সিফাতের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন, পুলিশের লাঠিপেটা
কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মৃত্যুর পর গ্রেপ্তার ও কারাবন্দি সাহেদুল ইসলাম সিফাতের মুক্তির দাবির মানববন্ধনে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এতে আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। এ ছাড়া সিফাতের নানা বামনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. আইউব আলী হাওলাদাকে গালমন্দ করার পাশাপাশি হুমকিও দিয়েছে পুলিশ।
এদিকে লাঠিপেটা করে মানববন্ধন ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার পর মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের দুষ্কৃতকারী বলে আখ্যা দিয়েছেন বামনার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ শনিবার দুপুর ১২টায় সিফাতের নিজ গ্রাম বরগুনার বামনায় মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করেন সিফাতের সহপাঠীরা। বামনার কলেজ রোড সড়কে শান্তিপূর্ণভাবে চলা মানববন্ধনে হঠাৎ পুলিশের একটি দল এসে ব্যানার ফেস্টুন ছিনিয়ে নেয়।
এর পরও শান্তিপূর্ণভাবে চলছিল মানববন্ধন কর্মসূচি। পরে বামনা থানার ওসি মো. ইলিয়াস হোসেন মানববন্ধনস্থলে এসেই অংশগ্রহণকারীদের গালমন্দ শুরু করে লাঠিপেটার নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এতে শান্তিপূর্ণভাবে চলা মানববন্ধন পণ্ড হয়ে যায়। লাঠিপেটা করেন ওসি নিজেও।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী স্থানীয় এলাকাবাসী রুবেল বলেন, ‘সিফাত অত্যন্ত ভালো ছেলে। আর যাই হোক- সিফাতের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ কোনোভাবেই মানা যায় না। মিথ্যা মামলায় নির্দোষ সিফাত জেলে থাকায় ওর মুক্তির জন্য মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এ সময় পুলিশ প্রথমে আমাদের মানববন্ধনের ব্যানার ফেস্টুন ছিনিয়ে নেয়। এর পরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছিলাম। পরে বামনা থানার ওসি এসে আমাদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করে।’
রুবেল আরো বলেন, ‘সিফাতের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করায় পুলিশ আমাদের দুষ্কৃতকারী বলে আখ্যা দিয়েছে। এ ছাড়া নাতির মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে আসায় সাংবাদিকদের সামনে সিফাতের নানা মো. আইউব আলী হাওলাদারকে গালমন্দ করার পাশাপাশি হুমকি দেয় পুলিশ।’
এ বিষয়ে বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আমাদের অনুমতি না নিয়ে একদল দুষ্কৃতকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছে বলে আমি জানতে পেরেছি। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে বলে মানববন্ধন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
সিফাতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সিফাত বড়। সিফাতের বোন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ১০ বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদের পর সিফাতের মা নয় বছর ধরে লন্ডন প্রবাসী। আর বাবা থাকেন ঢাকায়।
সিফাতের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বরগুনার বামনা উপজেলার পশ্চিম সফিপুর গ্রামের নানা বাড়িতে। বামনার সরকারি সারওয়ার জান মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন সিফাত। এরপর বামনার সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগে।
ঢাকায় ভর্তি হওয়ার পর খালার বাসায় থেকে লেখাপড়া করতেন সিফাত। বছরে দুই-চারবার বামনায় এলেও পড়ে থাকতেন ক্যামেরা আর ট্রাইপড নিয়ে। ছবি তোলার নেশায় ঘুরে বেড়াতেন এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়। শৈশবে মা-বাবার স্নেহ-ভালোবাসা বঞ্চিত হলেও সিফাত কখনো বিপথগামী হননি বলে জানান সহপাঠী ও গ্রামের লোকজন।