এক মাসে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে এক ডজন হত্যা মামলা
কক্সবাজারের টেকনাফ থানার প্রত্যাহার হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় গত ৬ আগস্ট। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে মোট ১৫ জনকে কথিত ক্রসফায়ারের নামে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছে।
সবশেষ আজ বৃহস্পতিবার ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে আরো দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মোট ১২টি হত্যা মামলা দায়ের করা হলো। এ ছাড়া সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগে আরো একটি মামলা হয়েছে। এর বাইরে আরেকটি হত্যা মামলার জন্য আবেদন করা হলেও আদালত তা খারিজ করে দেন।
আজ বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (টেকনাফ-৩) হেলাল উদ্দীনের আদালতে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়ার আবদুল আমিন ও হোয়াইক্যংয়ের মুফিজ আলম নামের দুজনকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যার অভিযোগ এনে ওসি প্রদীপসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার পর বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু মুছা গণমাধ্যমকে বলেন, একটি মামলায় ওসি প্রদীপসহ ৩৮ জনকে এবং অপর মামলায় ওসি প্রদীসহ মোট ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দুটির বাদী হয়েছেন নিহত আবদুল আমিনের ভাই নুরুল আমিন এবং মুফিজ আলমের ভাই মো. সেলিম।
আইনজীবী আরো বলেন, ফৌজদারি মামলার এজাহার দুটি আমলে নিয়েছেন আদালত এবং ওই ঘটনা সংক্রান্ত থানায় কোনো মামলা হয়েছে কি না, তা আগামী ধার্যদিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাহারছড়ার আবদুল আমিন হত্যা মামলার আবেদনে বাদী উল্লেখ করেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে সুপারি ব্যবসায়ী আবদুল আমিনের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে টেকনাফ থানার পুলিশ। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমিনকে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসে একদল পুলিশ।
থানায় নিয়ে গিয়েও পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন ওসি প্রদীপ। শেষে বাধ্য হয়ে ৫০ হাজার টাকা দেয় পরিবার। বাকি টাকার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর আমিনের স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে যায় পুলিশ। তখন স্ত্রীর কাছে বাকি টাকা দাবি করে পুলিশ। এতে অস্বীকৃতি জানানো হলে ওই দিন রাতে ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আবদুল আমিনকে ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে হত্যা করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এটি ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে এগারতম মামলা।
মুফিজ আলম হত্যার মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, টেকনাফ থানা পুলিশ মুফিজ আলমের কাছে ১৫ লাখ চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। একপর্যায়ে টাকা না দিলে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয়। তাই বাধ্য ২০১৯ সালের ১২ জুলাই পুলিশকে ছয় লাখ টাকা দেন মুফিজ। টাকা নেওয়ার পরদিনই মুফিজ আলমকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়। এটি ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে বারতম হত্যা মামলা।
প্রদীপের বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এরপর ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। এটিই ছিল প্রদীপের বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা।
সাদ্দাম হোসেন হত্যা মামলা
এরপর গত ১৮ আগস্ট চাহিদামতো ঘুষ দেওয়ার পরও এক ব্যক্তিকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার অভিযোগ এনে প্রদীপ কুমার দাসসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করা হয়। এই মামলাটি করেন টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার গুল চেহের। তিনি অভিযোগ করেছেন, পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার পরও তাঁর ছেলে সাদ্দাম হোসেনকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হয়। এটি ছিল প্রদীপের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় হত্যা মামলা। এই মামলায়ও প্রদীপ কুমার দাশ দুই নম্বর আসামি। মামলার ২৮ আসামির ২৭ জনই পুলিশের সদস্য।
প্রবাসী মাহমুদুর হত্যা মামলা
গত ২৬ আগস্ট এক প্রবাসীকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার অভিযোগ এনে তাঁর ভাই কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদালত-৩-এ ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে আরেককটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক চন্দ্রকে প্রধান আসামি করে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এটি ছিল প্রদীপের বিরুদ্ধে তৃতীয় হত্যা মামলা।
এই মামলায় আসামি মোট ২৩ জন। নিহত প্রবাসী মাহমুদুর রহমানের ভাই নুরুল হোসাইন মামলাটি করেন। শুনানি শেষে ওই ঘটনায় অন্য কোনো হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে কি না, তা আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানাতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আব্দুল জলিল হত্যা মামলা
এর পরের দিন অর্থাৎ ২৭ আগস্ট টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সানোয়ারা বেগম বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের আদালতে ১২ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। তিনি তাঁর স্বামী আব্দুল জলিলকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মসিউর রহমানকে প্রধান আসামি করা হয়। আসামি হিসেবে ওসি প্রদীপ কুমারের নাম রয়েছে দুই নম্বরে। এটি ছিল প্রদীপের বিরুদ্ধে চতুর্থ হত্যা মামলা।
দুই সহোদর ও ভাগনে হত্যা মামলা
তিনজনকে হত্যার দায়ে এই মামলাটি হয়েছে গত ৩১ আগস্ট। কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হেলাল উদ্দীনের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন টেকনাফ উপজেলার রঙ্গিখালী এলাকার বাসিন্দা সুলতানা রাবিয়া মুন্নী। মামলায় ৪১ আসামির মধ্যে ৩৫ জনই পুলিশ সদস্য। ওসি প্রদীপকে মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। এটি প্রদীপের বিরুদ্ধে পঞ্চম হত্যা মামলা।
মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ৬ মে দিবাগত রাত ২টার দিকে তাঁর স্বামী সৈয়দ আলম, সৈয়দের ভাই নুরুল আলম এবং তাঁদের ভাগনে আনসার সদস্য সৈয়দ হোছন ওরফে আবদুল মোনাফকে ওসি প্রদীপ ও এসআই মশিউর রহমানের নেতৃত্বে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে এই তিনজনকে ‘ক্রসফায়ার’ থেকে বাঁচাতে তাঁদের পরিবারের কাছে ওসি প্রদীপ ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। টাকা না পেয়ে ওই রাতেই তিনজনকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যা করা হয়। তাঁদের লাশ পড়েছিল বাড়ির কাছে পাহাড়ের পদদেশে তাঁদেরই একটি ধানক্ষেতে। সৈয়দ হোছন ওরফে আবদুল মোনাফ নিজেকে আনসার সদস্য পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়।
মুছা আকবর হত্যা মামলা
টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাইঙ্গ্যা ঘোনা এলাকার বাসিন্দা কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত মুছা আকবরের (৩৫) স্ত্রী শাহেনা আকতার বাদী হয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর এই মামলাটি করেন। এটি ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ হত্যা মামলা।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাইঙ্গ্যা ঘোনার বাসিন্দা মুছা আকবরের বড় ভাই আলী আকবরের বাড়ি পুড়িয় দেয় টেকনাফ থানার একদল পুলিশ। পরে এ ঘটনায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করে ওই পরিবারের সদস্যরা।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ২৮ মার্চ রাতে মুছা আকবরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে ক্রসফায়ার না দেওয়ার কথা বলে মুছার পরিবারের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু পরিবার তখন তিন লাখ দিতে সামর্থ্য হয়। তিন লাখ টাকা নিয়েও ওই দিন ভোরে মুছা আকবরকে ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ করা হয়।
সাহাব উদ্দীন হত্যা মামলা
এই মামলাটি করেছেন টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাঞ্জরপাড়া এলাকার ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত সাহাব উদ্দিনের (৩০) বড়ভাই হাফেজ আহমদ। গত ২ সেপ্টেম্বর তিনি কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (টেকনাফ-৩) হেলাল উদ্দীনের আদালতে মামলাটি করেন। এটি প্রদীপের বিরুদ্ধে সপ্তম হত্যা মামলা।
এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল টেকনাফ থানার এসআই দীপক বিশ্বাসের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সাহাব উদ্দীনকে তাঁর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে ক্রসফায়ার না দেওয়ার কথা বলে তাঁর পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু পরিবার ৫০ হাজার দিতে পারে। আরো চার লাখ ৫০ হাজার টাকা না দেওয়ায় ২০ এপ্রিল রাতে কাঞ্জরপাড়া ধানক্ষেতে ক্রসফায়ারের নামে সাহাব উদ্দীনকে গুলি হত্যা করা হয়।
ফারুক-আজাদ হত্যা মামলা
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার মো. ফারুক ও তাঁর ছোটভাই আজাদকে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি ও হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমীর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহতদের ছোট বোন রিনা সুলতানা শাহীন। গত ২ সেপ্টেম্বর এই হত্যা মামলাটি দায়ের করা হয়। এটি প্রদীপের বিরুদ্ধে অষ্টম হত্যা মামলা।
এই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৩ জুলাই বাহারাইন ফেরত আজাদ নিখোঁজ হয়। এর দুদিন পর ১৫ জুলাই আজাদের বড় ভাই ফারুককে বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের সামনের ভাড়া বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় চন্দনাইশ থানা পুলিশ। ওই দিন সন্ধ্যায় ফারুককে টেকনাফ থানায় হস্তান্তর করা হয়। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফারুক ও আজাদের মায়ের মোবাইল ফোনে একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। অজ্ঞাত একজন বলেন, ‘তোর দুই ছেলে আমাদের কাছে আছে। দুই ছেলেকে জীবিত ফেরত চাইলে রাতের মধ্যে আমাদের আট লাখ টাকা দিতে হবে। না হলে সকালে ছেলের লাশ পাবি। এর পরই লাইন কেটে দেওয়া হয়।’
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১৬ জুলাই ফারুক ও আজাদকে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে হত্যা করেন টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেশব চক্রবর্তীর যোগসাজশে এই হত্যা করা হয়।
নূর মোহাম্মদ হত্যা মামলা
নিহত নূর মোহাম্মদের মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, গত বছরের ১৯ মার্চ বীজ ও সার আনতে কৃষি অফিসে যান ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ। সেখান থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাঁর পরিবারের থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন ওসি প্রদীপসহ অন্যরা। না দিলে নূর মোহাম্মদকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। পরিবার তখন পাঁচ লাখ টাকা জোগাড় করে পুলিশকে দেয়।
কিন্তু ২১ মার্চ রাতে নূর মোহাম্মদকে মেরিন ড্রাইভ সড়কের রাজারছড়া এলাকায় ঝাউবাগানে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে তাঁর স্ত্রী লায়লা মামলায় অভিযোগ করেন। এই মামলাটি ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে নয় নম্বর মামলা।
আজিজ হত্যা মামলা
নিহত মো. আজিজ আহমদ হত্যা মামলায় বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর টেকনাফ থানার একদল পুলিশ মো. আজিজ আহমদ, নূর হাসান ও আবুল খায়ের নামের তিনজনকে ধরে নিয়ে যায়। পরে আজিজের পরিবার থেকে ২০ লাখ টাকা দাবি করে ওসি প্রদীপসহ অন্যরা। টাকা না দিলে আজিজকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। নিরুপায় হয়ে ৫০ হাজার টাকা পুলিশকে দেয় আজিজের পরিবার। কিন্তু ১৯ অক্টোবর রাতে টেকনাফের মহেশখালীয়াপাড়া নদীঘাট এলাকায় আজিজকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এটি ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে দশম হত্যা মামলা।
সাংবাদিক নির্যাতনের মামলা
নির্যাতন, চাঁদাবাজি, অপহরণের অভিযোগ এনে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে এই মামলাটি করেন কক্সবাজারের স্থানীয় জনতারবাণী ডটকম ও দৈনিক কক্সবাজার বাণী পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ফরিদুল মোস্তফা খান। তিনি গত মঙ্গলবার কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালত-৪-এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় ওসি প্রদীপ, টেকনাফ থানার বর্তমান ওসি এম এস দোহাসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীরা।
আইনজীবীরা আরো বলেন, মামলার বাদীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে হয়রানিমূলক ছয়টি মামলা করা হয়েছে। তারপর তাঁকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। চারবার তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি ১১ মাস পাঁচ দিন কারাভোগ করেছেন। এখন জামিনে বেরিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
একটি হত্যা মামলা খারিজ
এ ছাড়া গত ১২ আগস্ট মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নে ২০১৭ সালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী হামিদা আক্তার (৪০) বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এই মামলার আসামিদের মধ্যে প্রদীপ ছাড়াও আরো পাঁচজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। ঘটনার সময় প্রদীপ কুমার দাশ মহেশখালী থানার ওসি ছিলেন।
পরের দিন অর্থাৎ ১৩ আগস্ট মহেশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। তবে ওই ঘটনায় তিন বছর আগে পুলিশের দায়ের করা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত।