রিফাত হত্যা মামলা : অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায় ২৭ অক্টোবর
বহুল আলোচিত বরগুনার মো. শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায় আগামী ২৭ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে। আজ বুধবার দুপুরে বরগুনা জেলা শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান রায়ের এ তারিখ ঘোষণা করেন।
রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর এ আদেশ দেন আদালত।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে ৭৪ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হওয়ার পর সব আসামির পক্ষে-বিপক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। আজ আদালতে উপস্থাপিত রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি খণ্ডন শেষে এ রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।
এদিকে মামলার ধার্য তারিখ থাকায় আজ সকাল ৯টার দিকে আদালতে হাজির হয় এ মামলায় জামিনে থাকা আটজন অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামি। এরপর কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয় এ মামলায় কারাগারের শিশু ওয়ার্ডে থাকা অপ্রাপ্তবয়স্ক ছয় আসামিকেও।
আদালত প্রাঙ্গণজুড়ে পুলিশ কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সব বিচারপ্রার্থীকে তল্লাশি করে ঢোকানো হয় আদালতে।
গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই বছর ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত। এরপর ১৩ জানুয়ারি থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের রায় ঘোষণা করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসি ও আর বাকি চারজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।
এদিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি গত ৬ অক্টোবর খালাস চেয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করেন।
এ বিষয়ে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেছি। আপিলে আমরা উল্লেখ করেছি, এটি ভুল রায়। রায়ের প্রতিটি লাইনের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে।’
আইনজীবী বলেন, ‘মিন্নিকে মূলত দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারা জবানবন্দির আলোকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অথচ এ জবানবন্দির বিরুদ্ধে মিন্নি পরক্ষণেই আদালতকে বলেছিলেন। মিন্নি এই জবানবন্দি অস্বীকার করেছেন। তিনি এটাও বলেছেন যে, জোরপূর্বকভাবে জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। কেননা, জবানবন্দি রেকর্ড করার আগে জেলা পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে মিন্নির দোষ স্বীকার বিষয়টি প্রকাশ করেন। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি।’
রিফাত হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মো. রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)।
রায়ে খালাসপ্রাপ্ত চার আসামি হলেন মো. মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সাইমুন (২১)।
গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ৪২৯ পৃষ্ঠার রায়ের কপি প্রকাশ করেন বিচারিক আদালত। রায়ের কপি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির পরিবারকে দেওয়া হয়। এর পরের দিন ৪ অক্টোবর নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির রায়ের নথি হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। পুলিশের বিশেষ পাহারায় রিফাত হত্যা মামলার যাবতীয় নথি নিয়ে আসেন বরগুনা কোর্টের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর।
নিয়ম অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) উচ্চ আদালতে মামলার যাবতীয় কার্যক্রমের নথি পাঠানো হয়। রায় হাইকোর্টে আসার পর আসামিরা সাত দিনের মধ্যে আপিল আবেদন করতে পারেন। মূলত কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ‘ডেথ রেফারেন্স’ মামলা হিসেবে পরিচিত। তবে দণ্ডিতরা বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল ও আপিলের সুযোগ পাবেন।