ওবামার অভিবাসননীতি নিয়ে শঙ্কা কাটছেই না
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত চার মিলিয়নের বেশি অবৈধ বা কাগজপত্রহীন অভিবাসীকে দেশটিতে বাস করার ও কাজের সুযোগ করে দেবেন। ফলে দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন তাঁরা। কিন্তু এই সুবিধা যে বেশির ভাগ অভিবাসী পাচ্ছেন না তা এক প্রকার নিশ্চিতই।
বারাক ওবামার বিরুদ্ধে কনজারভেটিভদের নির্বাচনী প্রচারণার মূল হলো ওবামার এই অভিবাসন নীতি। তবে উচ্চ আদালতের নানা মারপ্যাঁচে আটকে আছে এই পুরো প্রক্রিয়া। এমনকি রাষ্ট্রপতির নির্বাহী ক্ষমতাবলেও এটি কার্যকর করা যাচ্ছে না।
তবে যদি এটাও ধরে নেওয়া হয় যে প্রেসিডেন্ট ওবামা এই আইনি লড়াইয়ে জয়ী হচ্ছেন তাহলেও এর ফলাফল আগামী গ্রীষ্মের আগে কার্যকর হচ্ছে না। এরপর আর যে কদিন বারাক ওবামা ক্ষমতায় থাকবেন তার মধ্যে খুব বেশি হলে কয়েক হাজার অভিবাসী স্থায়ী হওয়ার যোগ্যতার পরীক্ষায় পাস করতে পারবেন।
এর আগে মার্কিন কংগ্রেসের আপত্তির মুখে নিজের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির সংস্কারের কথা জানান বারাক ওবামা। ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য এক নির্বাহী আদেশ জারি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
বিশেষত দেশটির বৈধ নাগরিকদের বাবা-মায়ের সুরক্ষার জন্য অভিবাসন নীতি কিছুটা প্রসারিত করার পরিকল্পনা হাতে নেন তিনি। এর ফলে প্রায় চার মিলিয়ন অভিবাসী উপকৃত হতেন। নিজের সব আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই পদ্ধতি কার্যকর করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন বারাক ওবামা। যদিও এই সিদ্ধান্তের জন্য নিজের দলের মধ্যেও বেশ চাপে ছিলেন তিনি।
প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতাবলে অভিবাসন আইন সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়ায় ওবামার তীব্র নিন্দা করেন রিপাবলিকানরা। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের হার বাড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন অনেক রিপাবলিকান। এ ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বারাক ওবামার বিরুদ্ধে মামলা করে দেশটির ২৬টি অঙ্গরাজ্য। মামলায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশকে বেআইনি ঘোষণার দাবি জানানো হয়। মামলায় আরো বলা হয়, এই আদেশ কার্যকর হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর ব্যয় বাড়বে।
এর মধ্যে গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালতে ওবামার অভিবাসন প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। নিউ অরল্যান্সের একটি আদালতের ওবামার অভিবাসননীতির ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে আবেদন করে ওবামা প্রশাসন। তবে আপিল আদালত এই আবেদন খারিজ করে আগের আদেশ বহাল রাখেন।
এদিকে গত বুধবার থেকে ফিফথ সার্কিট কোর্ট ভবনের সামনে ওবামার পক্ষে অনশন করছেন বেশকিছু বিক্ষোভকারী। সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার জন্য দ্রুত প্রশাসনকে সময় দিতে হবে এই সার্কিট কোর্টকে।
এ বিষয়ে সাউথ টেক্সাস কলেজের আইন বিভাগের অধ্যাপক জোশ ব্ল্যাকম্যান নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের শুরুতে সার্কিট কোর্ট থেকে সময় পেলে ওবামার এই সময়ের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের রায় পাওয়া যাবে। তবে যত দ্রুতই সব কিছু করা হোক না কেন ২০১৬ সালের জুন মাসের আগে সুপ্রিম কোর্টের রায় পাওয়া যাবে না। এরপর ওবামার ক্ষমতাকালের আর মাত্র কিছু সময় বাকি থাকবে। এর মধ্যে অভিবাসীদের বৈধতা দিতে ওবামা প্রশাসনকে অসংখ্য কাজ করতে হবে। তা ছাড়া এরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উত্তাপও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। সব মিলিয়ে বেশ চাপের মধ্যেই রয়েছে এই মুহূর্তে ওবামা প্রশাসন। এখন সময়ই বলে দেবে কী হতে যাচ্ছে নির্বাহী ক্ষমতাবলে দেওয়া বারাক ওবামার আদেশের।
অন্যদিকে আদালতের দ্রুত সিদ্ধান্তের জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন রকমের কর্মসূচি শুরু করেছেন বৈধ অভিবাসীরা। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রিপাবলিকানরা যেন বুঝতে পারে যে তাদের ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ আপাতত সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছেন তাঁরা।