গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার রোডমার্চে পুলিশের লাঠিপেটা
মানিকগঞ্জে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার রোডমার্চে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মানিকগঞ্জ শহরে এ ঘটনা ঘটে। লাঠিপেটায় গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।urgentPhoto
সুন্দরবনের পাশে বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে আজ শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে যাত্রা শুরু করে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মানিকগঞ্জ শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে উপস্থিত হতে থাকেন রোডমার্চে অংশগ্রহণকারী কর্মীরা। পরে তাঁরা দুপুরের খাবার খান। কর্মীরা জানান, বিকেল ৪টার পর পুলিশ এসে এখানে (স্মৃতিস্তম্ভে) জড়ো হতে নিষেধ করে। একই সঙ্গে কোনো ধরনের সমাবেশ ও মিছিল করতে নিষেধ করে। সাড়ে ৪টার দিকে মিছিলের প্রস্তুতি নিতেই পুলিশ এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা করতে থাকে।
এ ব্যাপারে রোডমার্চে অংশগ্রহণকারী গণসংহতি আন্দোলনের পরিচালনা কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ স্থানে সমাবেশ করার জন্য গত ৯ অক্টোবর আমরা অনুমতি চেয়ে আবেদন করি।
পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয় সমাবেশ করেন, সমস্যা নেই। পুলিশের সামনেই গতকাল থেকে মাইক লাগানোসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তখনো আমাদের বলা হয়নি যে আজ সমাবেশ করা যাবে না। আজ জড়ো হওয়ার পরই পুলিশ জানায়, এখানে সমাবেশ করা যাবে না। এরপর বলা হয় মিছিলও করা যাবে না। এ ব্যাপারে ওপর থেকে নির্দেশ আছে বলে আমাদের জানানো হয়। আমরা বলি, এখানে তো ১৪৪ ধারা জারি হয়নি। এরপর মিছিলের প্রস্তুতি নিতেই পুলিশ লাঠিচার্জ করতে থাকে।’
লাঠিপেটায় গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড সুধাংশু চক্রবর্তী, বহ্নি শিখা, তমাসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। পরে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। বিকেল সাড়ে ৫টায় মানিকগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত গিয়ে রোডমার্চটি রাজবাড়ীর উদ্দেশে রওনা হয়।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, স্মৃতিস্তম্ভে সমাবেশ করার পূর্ব অনুমতি ছিল না তাঁদের কাছে। এ কারণে পুলিশ সমাবেশ করতে বাধা দেয়। পুলিশের ওপর রোডমার্চের অংশগ্রহণকারীরাই প্রথমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বলে তিনি দাবি করেন।
রোডমার্চটি আগামী ১৮ অক্টোবর বাগেরহাটে সুন্দরবনের পাশে পৌঁছানোর কথা আছে।
গণসংহতি আন্দোলনের নিন্দা : মানিকগঞ্জে বাম মোর্চার রোডমার্চ কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। আজ শুক্রবার গণসংহতি আন্দোলন কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা বাচ্চু ভূঁইয়া, ফিরোজ আহমেদ, শ্যামলী শীল, তাসলিমা আখতার, আবুল হাসান রুবেল এক যৌথ বিবৃতিতে বাম মোর্চার রোডমার্চ কর্মসূচিতে পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলা ও সমাবেশ ভণ্ডুল করে দেওয়ার প্রতিবাদ জানান এবং পুলিশের আচরণের তীব্র নিন্দা জানান।
আজ সন্ধ্যায় গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মনিরউদ্দিন পাপ্পুর পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আজ সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ঢাকা থেকে বাগেরহাটের কাটাখালী পর্যন্ত তিনদিনের রোডমার্চ শুরু হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ দুপুরে মানিকগঞ্জের শহীদ স্তম্ভে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সমাবেশের অনুমোদন চাইতে গেলে পুলিশ লিখিত অনুমতি না দিয়ে মৌখিক অনুমোদন দেয়। কিন্তু আজ সমাবেশ শুরু করতে গেলে পুলিশ চরম মাত্রায় অসহযোগিতা করে। পরে মিছিল করে কর্মসূচি শেষ করতে চাইলে ন্যক্কারজনকভাবে হামলা করে পুলিশ। পুলিশের এ হামলায় বাম মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতা ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু গুরুতর আহত হন। বাম মোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হকসহ বেশ কয়েকজন রোডমার্চের কর্মী আহত হয়েছেন।’
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, সরকার একদিকে জাতীয় সম্পদ উজাড় করে দিচ্ছে, ভারতীয় কোম্পানির স্বার্থে বাংলাদেশের সুন্দরবনকে নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ে গোঁয়ারের মতো বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবিজ্ঞানী, রাজনৈতিককর্মীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতকে উপেক্ষা করে প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রাজপথে তার প্রতিবাদ করতে গেলে সে পথও বন্ধ করে দিতে চাইছে এই ফ্যাসিবাদী সরকার। মানিকগঞ্জে তারই প্রমাণ পাওয়া গেল নির্মম পুলিশি হামলার ভেতর দিয়ে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এভাবে হামলা করে, পুলিশ দিয়ে, জনমতকে উপেক্ষা করে কোনোভাবেই এ দেশবিরোধী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না। এই গণতান্ত্রিক সরকার মনে করছে, ভারতের স্বার্থের পক্ষে কাজ করে ভারতের অনুকম্পা নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নেতারা বলেন, জনগণের মতামতের বাইরে গিয়ে পুলিশের শক্তির ওপর ভর করে কখনোই পার পাওয়া সম্ভব নয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনদিনের রোডমার্চ কর্মসূচির আর কোথাও যদি পুলিশ দিয়ে, মাস্তান দিয়ে বাধা দেওয়া হয়, হামলা করা হয় তাহলে এর জবাব দেওয়া হবে আন্দোলনের ভাষায়। ফুলবাড়ী, কানসাটে মানুষ জীবন দিয়ে প্রতিরোধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেই সংগ্রামের উত্তরাধিকারীরাই এবারও প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাণ সুন্দরবন রক্ষার জন্য। এই লড়াই থেকে এক পাও সরে আসার সুযোগ নাই। বিবৃতিতে নেতারা সেই সংগ্রামকে আরো জোরদার করার আহ্বান জানান।