শিপ্রা ও সিফাতের মাদক মামলার সত্যতা পাননি তদন্ত কর্মকর্তা
কক্সবাজারের টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় তাঁর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ ও সিফাতের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা দুই মাদক মামলার সত্যতা পাননি তদন্ত কর্মকর্তা। এই মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
দুই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকার রামু ও টেকনাফ আদালতে আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে এই প্রতিবেদন দাখিল করেন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ সময় সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা যে নীলিমা বিচ রিসোর্টে ছিলেন, সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নূরকে আটক করে। পরে তাহসিন রিফাত নূরকে অভিভাবকের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়। শিপ্রা দেবনাথকে রামু থানায় করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। আর সিফাতকে টেকনাফ থানায় করা হত্যা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার দুটি মামলা ও রামু থানায় করা মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সিফাত, শিপ্রা ও তাহসিন বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তাঁদের নিয়ে সিনহা মো. রাশেদ খান একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কক্সবাজারে প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ করছিলেন।
৯ আগস্ট শিপ্রা ও ১০ আগস্ট সিফাতের জামিন মঞ্জুর করেন কক্সবাজারের আদালত। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।
এদিকে, সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে র্যা ব। কক্সবাজারের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজ রোববার সকালে এ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যা ব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ আজ সকালে এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আশিক বিল্লাহ জানান, আজ এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে মোট ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি একজন পলাতক রয়েছেন।
এর আগে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানিয়েছিলেন, র্যা বের মহাপরিচালক (ডিজি) অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করলেই সেটি আদালতে দাখিল করা হবে।
এ ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র আজ দাখিল করেছে র্যা ব।
এদিকে আজ রোববার অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলা বাতিল চেয়ে প্রধান আসামি বরখাস্ত পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর পক্ষে করা রিভিশন আবেদনের ওপর শুনানির দিন রয়েছে। গত ৪ অক্টোবর এই রিভিশন আবেদনটি করা হয়। এরপর ২০ অক্টোবর সেটির ওপর শুনানির দিন ছিল। কিন্তু সেদিন মেজর সিনহার বোনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল ১০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। ১০ নভেম্বর আসামিপক্ষের আইনজীবী সময় প্রার্থনা করলে বিচারক ১৩ ডিসেম্বর (রোববার) দিন ধার্য করেন। সেই হিসেবে আজ এই রিভিশন আবেদনের শুনানি রয়েছে।
মেজর সিনহা হত্যার পর ৫ আগস্ট তাঁর বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে।
এরপর অভিযুক্ত সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে র্যা ব হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিনজন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এবং প্রদীপের দেহরক্ষীসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ ১৪ জনই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
কারাগারে থাকা অভিযুক্ত ১৪ জন হলেন—বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।