কুষ্টিয়ায় বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া মহাবিদ্যালয়ে স্থাপিত বৃটিশবিরোধী বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। এর আগে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলামকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি অন্য দুই সদস্য হলেন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিবুল ইলামাম ও কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজিবর রহমান।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, গতকাল দিবাগত রাত ১টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে পাঁচ ব্যক্তিকে ভাস্কর্য ভেঙে পালিয়ে যাওয়া সময় কয়া মহাবিদ্যালয়ের নাইটগার্ড খলিলুর রহমান দেখতে পান। পরে তিনি অধ্যক্ষকে জানান, কিন্তু অধ্যাপক বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে যান। পরে বেলা ১১টার দিকে স্থানীয়রা রাস্তা দিয়ে যাওয়া সময় দেখতে পান কে বা কারা বাঘা যতীনের মুখের ডান পাশের চোয়াল এবং নাকের পুরোটাই শক্ত কিছু দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ফেলেছে। ঘটনাটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক হইচই পড়ে যায়। মাত্র কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়া শহরের বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কার্য ভাঙচুরের ঘটনার পর এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ।
এ ঘটনার পর পরই কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন, পুলিশ সুপার এসএম তারভীর আরাফাত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তাঁরা।
ওসি আরো জানান, ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় কয়া মহাবিদ্যায়ের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ, কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় তাঁতী লীগের সহসভাপতি নিজামুল হক চুন্নু, নৈশ প্রহরী খলিলুর রহমান ও কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
১৮৭৯ সালে কুষ্টিয়ার কয়া গ্রামে জন্ম নিয়েছিলেন বাঘা যতীন। তিনি ভারতবর্ষকে পরাধীনতার শেকল ভেঙে মুক্ত করার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। মাত্র চারজন কিশোরযোদ্ধাকে নিয়ে সাড়ে চার হাজার ব্রিটিশ সৈন্যের বিশাল বাহিনীর সঙ্গে তিনি মরণযুদ্ধে নেমেছিলেন। সেই যুদ্ধেই নিহত হন ব্রিটিশবিরোধী এ যোদ্ধা।
এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পৌরসভার পক্ষ থেকে করা মামলায় পুলিশ সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে ভাঙচুরের সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুই মাদ্রাসাছাত্রকে শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করে। ঘটনার পর মাদ্রাসার ওই দুই ছাত্রকে সহযোগিতা করার জন্য মাদ্রাসার দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়। মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থী ও দুই শিক্ষক বর্তমানে এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।