‘লাইনে দাঁড়াতেই বোমা এসে পড়ল’
শোক ও ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ১০ মহররম। কারবালার প্রান্তরে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.) এবং তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের শহীদ হওয়ার দিনটিকে স্মরণ করতেই শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ১০ মহররম ‘তাজিয়া’ মিছিল করে, যার অর্থ শোক ও সমবেদনা। প্রতিবছরের মতো গতকাল শুক্রবার রাতেও মহররম উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলে শামিল হতে সমবেত হয়েছিল শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ হাজার হাজার মানুষ। মিছিলের জন্য লাইনে দাঁড়াতেই কেঁপে উঠল পুরো এলাকা।
প্রথমে তারা ভেবেছিল হয়তো মিছিল উপলক্ষে ফোটানো আতশবাজির শব্দই এটি। কিন্তু লোকজনের ছোটাছুটিতে একটু পরেই টের পান তাঁদের স্বজন আর বন্ধুবান্ধব বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত। মাটিতে গড়িয়ে পড়ছে রক্তের ধারা।
বোমা বিস্ফোরণের এ ঘটনায় নিহত হয় সাজ্জাদ হোসেন সানজু নামে এক কিশোর। আহত হয় শতাধিক। এদের মধ্যে ঢামেকে চিকিৎসাধীন আছেন ১২ জন।
বোমা বিস্ফোরণে দুই পায়ে আঘাত পেয়ে ঢামেকে চিকিৎসাধীন এক যুবক বলেন, ‘মিছিল শুরু হবে। তখন আমরা লাইনে দাঁড়াই। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে লাইনে এসে দাঁড়াই। তখন একটা বোমা এসে পড়ল, উপরে।’
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন আরেক নারী। তারও দুই পা ক্ষত-বিক্ষত। তিনি বলেন, ‘প্রথমে একটা বোমা মেরেছে, এরপর আরেকটা বোমা যখন মারল তখন মনে হলো কারেন্টের শট লেগেছে। পুরো শরীর ঝাকি মেরে উঠছে। ঝাকি মারার সাথে সাথেই মনে হলো যেন পা দিয়ে গরম পানি পড়ছে। ব্লাড যে বের হচ্ছে সেটা তখন দেখি নাই।’
গতকাল রাতে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘অনেক লোক, মিছিলের দিন। হঠাৎ চার-পাঁচটা বোমার শব্দ পাইলাম। আমাদের বোন, ভাই, যারা মিছিলকারী সবাই ছ্ন্নি-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।’
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি এবং প্রশাসনের তরফ থেকে দেওয়া কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যেই এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এ জন্য তারা পুলিশের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছে।
বিস্ফোরণের ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী দুজনই হাসপাতালে। নিজে সামান্য আহত হয়ে বিছানা ছাড়তে পারলেও স্ত্রী বেশ গুরুতর আহত হয়েছেন। ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, ‘হামলার ঘটনায় অবশ্যই পুলিশের ব্যর্থতা আছে। পুলিশের ব্যর্থতা না থাকলে এ ঘটনা ঘটত না। পুলিশ ছিল সব গেটের সামনে, আর যেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেখানে পুলিশ ছিল না।’
এদিকে পাকিস্তানেও পবিত্র আশুরা উপলক্ষে এক শোভাযাত্রায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সিন্ধু প্রদেশের জাকোবাবাদ শহরে এ হামলায় ২২ জন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হয়।