‘পুতিন প্রাসাদ’ নিজের বলে দাবি করলেন রুশ ধনকুবের
রাশিয়ার ধনকুবের ব্যবসায়ী আর্কাদি রটেনবার্গ দাবি করেছেন, কৃষ্ণ সাগর তীরের আলোচিত বিলাসবহুল অট্টালিকার মালিকানা তাঁর, এটি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘প্রাসাদ’ নয়। রটেনবার্গ ও পুতিন ছেলেবেলার বন্ধু। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
কৃষ্ণ সাগর তীরের প্রাসাদসম এক অট্টালিকা নিয়ে সম্প্রতি চালানো এক তদন্তের খবর গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ‘বিলাসবহুল প্রাসাদের’ মালিক প্রেসিডেন্ট পুতিন বলে দাবি করেন তাঁর সমালোচকেরা। সম্প্রতি একটি প্রামাণ্যচিত্রে এমনটি দাবি করা হয়। পুতিনের কট্টর বিরোধী হিসেবে পরিচিত কারাবন্দি নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রটি তাঁর লোকজন গত ১৯ জানুয়ারি ইউটিউবে প্রকাশ করে।
প্রামাণ্যচিত্রটি এখন পর্যন্ত ১০ কোটির বেশি বার দেখা হয়েছে। ইউটিউবে প্রামাণ্যচিত্রটির শিরোনাম দেওয়া হয়, ‘পুতিনের প্রাসাদ, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘুষের ইতিহাস।’
চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে পুতিন প্রতিপক্ষ অ্যালেক্সেই নাভালনির দাবি উড়িয়ে দিয়ে জানান, ওই অট্টালিকা তাঁর নয়। এমনকি তাঁর পরিবারের কোনো সদস্যেরও নয়।
এরপর গতকাল শনিবার পুতিনের ঘনিষ্ঠজন এবং এক সময়ের জুডো পার্টনার রটেনবার্গ প্রকাশ্যে দাবি করেন, তিনিই ওই অট্টালিকার মালিক।
অ্যালেক্সেই নাভালনির প্রামাণ্যচিত্রে দাবি করা হয়, কৃষ্ণ সাগরের তীরে এই প্রাসাদোপম অট্টালিকায় রয়েছে জুয়া খেলার ক্যাসিনো, বরফের ওপর স্কেটিং করার রিংক এবং আঙুরের খেত।
রটেনবার্গ এই প্রাসাদ তাঁর নিজের বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সামনে এসেছে ক্রেমলিনপন্থি ম্যাশ টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা এক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। এরপর এই খবর নিশ্চিত করে ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থা।
রটেনবার্গকে উদ্ধৃত করে তাঁর তথ্য দপ্তর বলেছে, ‘কয়েক বছর আগে এই অট্টালিকার সঙ্গে জড়িত কিছু পাওনাদারের সঙ্গে আমার চুক্তি হয় এবং সে অনুযায়ী এই সম্পত্তির মালিকানা আমার হাতে আসে।’
রটেনবার্গ জানান, আগামী ‘দু-তিন বছরের মধ্যে’ এই সম্পত্তিটি তৈরির সব কাজ সম্পন্ন হবে। তিনি একটি অ্যাপার্টমেন্ট হোটেল হিসেবে অট্টালিকাটি তৈরি করতে চান।
এই অট্টালিকা নিয়ে বিতর্ক কেন?
চলতি মাসের শুরুর দিকে পুতিন প্রশাসনের সমালোচক, বর্তমানে কারারুদ্ধ বিরোধী রাজনীতিক অ্যালেক্সেই নাভালনির লোকজন একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করার পর থেকে এই সম্পত্তি নিয়ে তোলপাড় তৈরি হয়।
তথ্যচিত্রে অভিযোগ করা হয় তাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে এই সম্পত্তির মূল্য ১৩৭ কোটি মার্কিন ডলার এবং এর মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের ঘুষের অর্থ’ দিয়ে।
এর আগে ২০১২ সালে বিবিসির সাংবাদিক টিম হোয়েওয়েল রাশিয়ার এই রহস্যজনক প্রাসাদ নিয়ে প্রতিবেদন করেন। ওই প্রতিবেদনে তিনি পুতিনের সাবেক একজন ব্যবসায়িক সহযোগীকে উদ্ধৃত করে করেন, যিনি অভিযোগ করেছিলেন যে অট্টালিকাটি পুতিনের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তাঁর চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু সে সময় পুতিনের একজন মুখপাত্র ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে জানান, ওই প্রাসাদের মালিক তিনি বা তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য নন। এবং পুতিন ওই ভিডিওটিকে ‘একঘেঁয়ে’ বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে প্রাসাদটি নিয়ে ওঠা অভিযোগ ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটকসহ রাশিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। গত সপ্তাহান্তে নাভালনির সমর্থনে রাশিয়াজুড়ে যে বিক্ষোভ হয়েছে তাতে ওই প্রাসাদের সঙ্গে পুতিনের জড়িত থাকার অভিযোগ বড় ধরনের ইন্ধন জুগিয়েছে। বহু বছরের পর রাশিয়ায় পুতিনের বিরুদ্ধে এত বড় বিক্ষোভ হয়েছে।
কে এই আর্কাদি রটেনবার্গ?
রটেনবার্গ রাশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তিত্ব। সেতু ও গ্যাস পাইপলাইনের মতো অবকাঠামো নির্মাণের বড় একটি সংস্থার মালিক এই রটেনবার্গ। তিনি পুতিনের ছোটবেলার বন্ধু এবং এক সময় রুশ প্রেসিডেন্টের জুডো খেলার সঙ্গী ছিলেন বলে জানা যায়।
গত বছরের শেষ দিকে রটেনবার্গ ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে লন্ডনের বার্কলেস ব্যাংকের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার এবং নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে গোপনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছিল।
রুশ ব্যবসায়ী রটেনবার্গের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৪ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যা এখনো বলবৎ রয়েছে। সে সময় মার্কিন কর্মকর্তারা রটেনবার্গকে ‘রুশ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ মহলের’ একজন সদস্য হিসেবে বর্ণনা করেন। মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেন যে রুশ প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ এই সহযোগী ‘পুতিনের প্রিয় প্রকল্পগুলো’ বাস্তবায়নে সাহায্য করেছেন।