ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিশাল চ্যালেঞ্জ দিল বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি মুমিনুল হক। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ঠিকই নিজেকে মেলে ধরলেন বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক। স্বাগরিকায় নিজের সপ্তম সেঞ্চুরি ও ক্যারিয়ারের দশম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি। তাঁর সেঞ্চুরিতে ভর করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৯৫ রানের বিশাল লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে আট উইকেটে ২২৩ রান করে বাংলাদেশ। ফলে প্রথম ইনিংসের লিডসহ ক্যারিবীয়দের সামনে ৩৯৫ রানের লক্ষ্য দাঁড় করাল মুমিনুল হকের দল। এই লক্ষ্য টপকাতে হলে রেকর্ড গড়তে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
কারণ, চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে এত রান তাড়া করে জিততে পারেনি কোনো দল। সাগরিকায় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নিউজিল্যান্ডের দখলে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ৩১৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৩ উইকেটে জিতেছিল তারা। এবার জিততে হলে সেই রেকর্ড ভাঙতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
ম্যাচটিতে ১৭৩ বলে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মুমিনুল। শতকের ঘরে যেতে মুমিনুল খেলেছেন ৯টি বাউন্ডারি। অবশ্য সেঞ্চুরির বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। ১১৫ রান করে আউট হন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। তাঁর সঙ্গে ১১২ বলে ৬৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস। শেষের দিকে মিরাজ করেন সাত রান ও তাইজুল করেন তিন রান।
চট্টগ্রাম টেস্টে বড় লিড নিয়েই আজ শনিবার চতুর্থ দিন শুরু করে বাংলাদেশ। গতকাল তিন উইকেটে ৪৭ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল বাংলাদেশ। উইকেটে ছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। আজ সকালে শুরুটা ভালোই করেছিলেন দুজন। তবে দলীয় ৭৪ রানের মাথায় কর্নওয়ালের বলে এলবিডব্লু হয়ে ফিরেছেন মুশফিক। ৪৭ বলে ১৮ রান করেন তিনি।
তবে লিড যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নিতে চাইছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। অবশ্য গতকাল শুক্রবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানেরা। একে একে ব্যর্থ হয়েছেন তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাদমান ইসলাম। তবুও প্রথম ইনিংসে বড় লিড পাওয়ায় স্বস্তি নিয়ে টেস্টের তৃতীয় দিন শেষ করে মুমিনুল হকের দল।
দ্বিতীয় ইনিংসে গতকাল ব্যাট করতে নেমে তিন উইকেটে ৪৭ রান নিয়ে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। দিন শেষে উইকেটে ছিলেন মুমিনুল হক (৩১) ও মুশফিকুর রহিম (১০)।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ হয়েছেন তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। বড় লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর আশা জাগিয়ে ফেরেন সাদমান ইসলাম। দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দিনের শেষভাগ ভালোভাবে পার করেন মুমিনুল ও মুশফিক।
শুরুর দিকে দুটি উইকেটই নিয়েছেন রাকিম কর্নওয়াল। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের চার নম্বর বলে প্রথমে এলবির ফাঁদে ফেলেন তামিমকে। এরপর সাজঘরে ফেরান শান্তকে। ১৫.১ ওভারে সাদমানকে আউট করেন গ্যাব্রিয়েল। ৪৩ বলে পাঁচ রান করেন তরুণ এই ওপেনার।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৯৬.১ ওভারে ১০ উইকেটে ২৫৯ রান তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে ১৭১ রানের বড় লিড পায় বাংলাদেশ।
গতকাল দুই উইকেটে ৭৫ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দিনের প্রথম সেশনেই তিন উইকেট হারায় তারা। প্রথম সেশনে তিন উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ান জশুয়া ডি সিলভা ও জার্মেইন ব্ল্যাকউড। দুজন মিলে ২৫৫ বল খেলে ৯৯ রানের জুটি গড়েন। অবশেষে থিতু হওয়া এই জুটিকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি ফেরান দুই স্পিনার—মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসান। কাল তৃতীয় দিনের আটটি উইকেটই পেয়েছেন স্পিনাররা। এর মধ্যে মিরাজ চারটি পেয়েছেন। সমান দুটি করে পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। আগের দিন দুটি উইকেট পেয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। এ ছাড়া ৬৮ রান আসে ব্ল্যাকউডের ব্যাট থেকে। ৪২ রান করেন ডি সিলভা। আর ৪০ রান আসে কাইল মেয়ার্সের ব্যাট থেকে।
ম্যাচ শুরুর দিন গত বৃহস্পতিবার মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৩০ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। ম্যাচের তৃতীয় দিনের খেলা শুরু হয় গতকাল। সফরকারী ক্যারিবীয়রা ৩৫৫ রানে পিছিয়ে থেকে খেলা শুরু করে।